রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest) বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটি গাছ কে “রাতা গাছ” বলে। সেই রাতা গাছের নাম থেকেই এই বনের নাম রাতারগুল। সারা বছর এই বন প্রায় ১০ ফুট পানির নিচে থাকে। বর্ষাকালে যার পরিমান বেড়ে দাঁড়ায় ২০-৩০ ফুট। এখানে জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালার ভিতর দিয়ে ডিঙি নৌকায় ঘুরেবেড়াতে দারুন মজা। এটি পৃথিবীর বিখ্যাত কয়েকটি জলাবনের মধ্যে অন্যতম একটি।
রাতারগুল কোথায় অবস্থিত
রাতারগুল বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে গুয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই বনের দক্ষিণ দিকে রয়েছে আরো দুটি হাওর: শিমুল বিল হাওর এবং নেওয়া বিল হাওর। এই বনের আয়তন প্রায় ৩,৩২৫.৬১ একর।
রাতারগুল কখন যাবেন
রাতারগুল যাওয়ার সব থেকে ভালো সময় হলো বর্ষাকাল। সে সময়ই এর পূর্ণ সৌন্দর্য দেখা যায়। তবে খেয়াল রাখবেন যেন তা মাঝ বর্ষায় না হয়। তখন বন্যায় সব কিছু ডুবে যায়। সব থেকে ভালো হয় বর্ষাকাল যখন শুরু হচ্ছে অথবা শেষ হচ্ছে তখন। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের মাঝামাঝি বেস্ট সময়।
রাতারগুল কিভাবে যাবেন
রাতারগুল যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। রাজধানী ঢাকা থেকে আপনি সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে যেতে পারেন সিলেট শহর। হানিফ, শ্যামলী, গ্রিনলাইন ইত্যাদি পরিবহনের বাস প্রতিদিন সকাল ৬ থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত একটু পর পর সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সিলেট থেকে ঢাকায় আসে। ভাড়া ৫০০/- থেকে ১০০০/- টাকা।
এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশ কিছু ট্রেন সিলেট যায়। আপনি ঢাকা থেকে আকাশ পথেও যেতে পারেন। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ফ্লাইট চলাচল করে। সময় নিবে প্রায় ৪৫ মিনিট। ভাড়া ৩০০০/- থেকে ৫০০০/- টাকা।
সিলেট শহর থেকে রাতারগুল
সিলেট শহর থেকে রাতারগুল যেতে হলে আপনাকে আসতে হবে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টে। এটি শাহজালাল রহঃ এর মাজারের গেইটের সাথেই। এখানে সিএনজি ষ্টেশন আছে। সিএনজি করে যেতে হবে রাতারগুল। দুরুত্ব প্রায় ২০ কিঃমিঃ। সময় নিবে এক ঘন্টার মতো।
আপনি শেয়ার করেও যেতে পারেন, আবার পুরা সিএনজি রিজার্ভ করেও যেতে পারেন। শেয়ারে গেলে ১০০/- এর মতো ভাড়া নিবে। আর রিজার্ভ করে নিলে আসা-যাওয়া ৪০০-৫০০ টাকা। রিজার্ভ করে নেয়াই উত্তম। কেননা ফেরার পথে সিএনজি নাও পেতে পারেন। তবে রিজার্ভ করে নেয়ার সময় অবশ্যই দরদাম করে নিবেন। ছুটির দিন হলে ভাড়া একটু বেশি নিবে। আর অন্য দিন হলে আরো কমেও পেতে পারেন।
সিএনজি থেকে নামলেই নৌকা ঘাট। ঘাট থেকে নৌকা দিয়ে যেতে হবে রাতারগুল। এখানে দুইটি ঘাট রয়েছে, মাঝের ঘাট এবং চৌরঙ্গি ঘাট । একেক ঘাটে একেক ধরণের ভাড়া। সিএনজিওলাকে বলবেন যে ঘাটে ভাড়া কম সেখানে নিয়ে যেতে। মাঝের ঘাট থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আসা যাওয়া ১৫০০ টাকা। চৌরঙ্গি ঘাট থেকে ৭০০-৮০০ টাকায় নৌকা পাওয়া যায়।
নৌকাওলারা তিন স্পট বলে আপনাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। একদমই পাত্তা দিবেন না। বলবেন আমি যাবো, ওয়াচ টাওয়ারে উঠে অন্য পথে দিয়ে আবার ফিরে আসবো।
হাতে সময় কম থাকলে এর পর চলে যেতে পারেন বিছানাকান্দি। তার জন্য আগেই ড্রাইভারকে বলে নিবেন, আর সকাল ৮ টার মধ্যে রওনা দেয়ার চেষ্টা করবেন। সকাল ১০ টার মধ্যে রাতারগুল পৌঁছে ১২ টা পর্যন্ত অবস্থান করে চলে যাবেন বিছানাকান্দি। দুপুর ৩ টার মধ্যে বিছানাকান্দি পৌঁছে, ২ ঘন্টা সেখানে সময়ে কাটিয়ে আবার সিলেট শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। সব কিছু ঠিক থাকলে রাত ৮ টা নাগাদ চলে আসবেন সিলেট শহর।
কোথায় থাকবেন
রাতারগুলে থাকার মতো তেমন কিছু নাই। আর দরকারও নাই। দেখা শেষ হলে চলে আসবেন সিলেট শহরে। এখানে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। ১০০০-২০০০ টাকার ভিতর ভালো মানের হোটেল পাবেন। তবে হোটেল নেয়ার সময় অবশ্যই আম্বরখানা এলাকায় নিবেন। এইখান থেকেই সব দিকে মুভ করার যানবাহন পাওয়া যায়।
কোথায় খাবেন
সিলেটে জিন্দাবাজার এলাকায় খাবারের জন্য বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেমন: পাঁচ ভাই, পানশি, পালকি। এদের মধ্যে পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এর খাবারের মান বেশ ভালো এবং তুলনামূলক ভাবে বেশ সস্তা। হরেক রকম ভর্তা, মাংস, খিচুরি বেশ টেস্টি।
এদের পাঁচ মিশালী আইটেম দারুন। সাথে একটা মাংস বা মাছ নিলে ভাত এবং ডাল একদম ফ্রি। খেয়ে বিল দেয়ার সময় একবার হলেও চিন্তা করবেন সিলেটের মানুষ কেন বাসায় রান্না না করে রেস্টুরেন্ট এ এসে খায়। ভালো কথা, এয়ার কন্ডিশন রুমে না বসে খেলে খাবারের বিল কিন্তু আরো কম আসে।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
রাতারগুল এর আশেপাশের আছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। হাতে সময় থাকলে দেখে যেতে পারেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।