চট্টগ্রাম বিভাগের দর্শনীয় স্থান

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ

Loading

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
napittochara-trail-3
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
napittochara-trail-3
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
napittochara-trail-3
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
Shadow

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ (Saint Martin Island) অপূর্ব সুন্দর এক প্রবাল দ্বীপ। নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলা গাঙচিল এই দ্বীপকে করেছে অনন্য। এর অপরূপ সৌন্দর্য ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ কে বার বার কাছে টেনে আনে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ (Coral Island)। এর আয়তন প্রায় ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এখানে প্রচুর নারিকেল গাছ পাওয়া যায় বলে স্থানীয় ভাবে একে “নারিকেল জিঞ্জিরা” (Narikel Jinjira) বলা হয়। এটি দারুচিনির দ্বীপ (Daruchini Dwip) হিসেবেও পরিচিত। কথিত আছে বহু বছর আগে আরবের দারুচিনি ভর্তি এক জাহাজ এখানে ডুবে যায়। আর দ্বীপের সবখানে দারুচিনি ছড়িয়ে পরে। তার পর থেকে এর নাম হয় যায় দারুচিনির দ্বীপ।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কোথায় অবস্থিত

সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমার এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় এর অবস্থান। দ্বীপটি সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ এর আওতাধীন। এই ইউনিয়নের গ্রাম গুলো হলো:- উওরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পূর্ব পাড়া, পশ্চিমপাড়া, নজরুল পাড়া, মাঝেরপাড়া, ডেইলপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপাপাড়া।

নামকরণ

১৯০০ খ্রিস্টাব্দে দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সেন্ট মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় সেন্টমার্টিন। এ নিয়ে অন্যরকম গল্প কাহিনীও প্রচলিত আছে। তবে সব গল্পেই সেন্ট মার্টিন নাম কমন।

সেন্ট মার্টিনে কি করবেন

সেন্ট মার্টিন আসার পূর্বেই ট্যুর প্ল্যান বা কখন কি করবেন তার একটা খসড়া করে আসবেন। কয়দিন থাকবেন ঠিক করে নিবেন। চেষ্টা করবেন মিনিমাম ১ রাত এখানে থাকতে। ২ রাত থাকলে সব থেকে বেস্ট। সেক্ষেত্রে ১ দিন ছেড়া দ্বীপ, ১ দিন সেন্ট মার্টিনে সময় কাটাতে পারবেন।

ভ্যান বা বাই সাইকেল ভাড়া করে পুরা দ্বীপ ঘুরে বেড়াতে পারেন। বিকালের মধ্যেই অনেক পর্যটক ফিরে যায়। তখন ঘুরেবেড়াতে বেশি মজা। পূর্ণিমার রাতে এখানে ঘুরেবেড়ালে অন্যরকম লাগে। উত্তর দিকের বিচে গোসল করতে পারেন। পশ্চিম দিকের বিচ থেকে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। এখানে নানা রকমের সি ফিশ পাওয়া যায়। খেয়ে দেখতে পারেন।

খুব সকালে ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণে চলে যেতে পারেন। জেটির কাছ থেকে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১০০/২০০ টাকা। পায়ে হেঁটে বা সাইকেল চাইলিয়েও ছেঁড়া দ্বীপ যেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই জোয়ার ভাটার সঠিক সময় জেনে নিবেন।

সেন্ট মার্টিনে স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং

এখন সেন্ট মার্টিনে স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং করা যায়। কৃত্তিম অক্সিজেন নিয়ে পানির গভীরে মাছেদের সাথে সাঁতার কাটা সত্যিই আশ্চর্যজনক। স্বচ্ছ পানির নিচে দেখা মিলবে বিচিত্র সব জীবন্ত কোরাল, নানা রঙের জলজ উদ্ভিদ। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এখানে স্কুবা ডাইভিং এবং স্নোরকেলিং করা যায়।

স্নোরকেলিং: ৭০০ টাকা
স্কুবা ডাইভিং: ২,৫০০ টাকা
স্নোরকেলিং স্কুবা ডাইভিং: ৩,০০০ টাকা

যোগাযোগ

ঢাকা ডাইভার্স ক্লাব: ০১৭১১-৬৭১১৩০
কোরাল ভিউ রিসোর্ট: ০১৭৯৬-৪৪৬৬৫৩
ওশেনিক স্কুবা ডাইভিং সার্ভিস: ০১৭১১-৮৬৭৯৯১

সেন্ট মার্টিন কিভাবে যাবেন

সেন্ট মার্টিন যেতে হলে প্রথমে আসতে হবে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ। রাজধানী ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফে যাওয়া যায়। ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। এদের মধ্যে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাসে সময় নিবে ১০/১২ঘন্টা। বাস ভাড়া ৯০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

অথবা ঢাকা থেকে বাস/প্লেনে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ

চট্টগ্রাম থেকে বাসে টেকনাফ যাওয়া যায়। চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস, গরীবুল্লাহ শাহ মাজার থেকে এস আলম, সৌদিয়া কোম্পানির এসি, নন-এসি বাস ছাড়ে। ভাড়া ৪০০ টাকা। সময় নিবে ৪/৫ ঘন্টা। বাস ছাড়ার সময় রাত ১২ টা থেকে ২ টা।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ

কক্সবাজার থেকে বাস, প্রাইভেট কার, জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যায়। সময় নিবে ২ ঘন্টা। কক্সবাজার বাস টার্মিনাল এবং লাল দীঘির পাড় থেকে ভোর ৫:৩০ মিনিটে বাস ছাড়ে। বাস ভাড়া ১৪০/১৫০ টাকা। এজেন্ট এর মাধ্যমে নিলে ২০০ টাকা।

টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন

প্রতিদিন বেশ কিছু জাহাজ টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে রুটে আসা-যাওয়া করে। তাদের মধ্যে কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ও গ্রীনলাইন ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য। জাহাজগুলো সকাল ৯.০০ থেকে ৯.৩০ মিনিটে টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়। বিকাল ৩.০০ থেকে ৩.৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে যায়। তাই সময়ের আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত না হতে পারলে জাহাজ মিস হবার সম্ভাবনা আছে।

জাহাজের শ্রেনীভেদে আপ-ডাউন ভাড়া ৬৫০/১৬০০ টাকার মত। এছাড়া ট্রলার এবং স্পিডবোট দিয়েও যাওয়া যায় সেন্ট মার্টিন। ট্রলার ভাড়া ৮০০ টাকার মতো। অথবা জন প্রতি ১০০ টাকা করেও যেতে পারেন। তবে ট্রলারে যাওয়া লাইফ রিস্ক। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

এছাড়া নৌপথে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ যেতে পারেন।

কখন যাবেন

জাহাজ গুলো সধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ এই পাঁচ মাস পর্যন্ত চলাচল করে। এই সময়ই সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সিজন। এই সময় ছাড়া অন্য সময়ে গেলে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট দিয়ে যেতে হবে। শীত মৌসূম ছাড়া বাকি সময় সাগর উত্তাল থাকে। তাই ওই সময়ে ভ্রমণ নিরাপদ নয়। তাছাড়া অফ সিজনে বেশিরভাগ হোটেল, কটেজ, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকে। তবে স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে থাকা যায়। ডিসেম্বর – জানুয়ারি পিক সিজন। ডিসেম্বর শেষ – জানুয়ারি শুরু সুপার পিক সিজন।

কোথায় থাকবেন

সেন্ট মার্টিনে রাতে থাকার জন্য বেশ কিছু উন্নত মানের হোটেল ও কটেজ রয়েছে। এছাড়াও অনেক বাড়িতে পর্যটকদের জন্য থাকার সুব্যবস্থা আছে। রুম এর ভাড়া সিজন এর সময় কোন নির্দিষ্ট নেই। ট্যুরিস্ট কম বেশি হলে ভাড়া সেভাবে বাড়ে কমে।

ছুটির দিন গুলোতে সাধারণত ভাড়া বাড়ে। সিজনে ১৫০০/২০০০ টাকার কমে রুম পাওয়া কষ্টকর। আর অফ সিজনে ৭০০/১২০০ টাকায় রুম পাওয়া যায়। রিসোর্টের প্রতি রুমে ৪ জন করে আরামে থাকা যায়। চেক আউট সময় ১১ টা।

সেন্ট মার্টিনে পরিচিতি কিছু হোটেল, রিসোর্ট

কিছু হোটেল এবং রিসোর্টের নাম, ফোন নাম্বার নিচে দেয়া হলো। সবগুলোর লোকেশন গুগল ম্যাপস এ দেয়া আছে। যাবার আগে কষ্ট করে একটু দেখে নিলে ভালো হয়।

  • কোরাল ভিউ রিসোর্ট (Coral View Resort): ভাড়া ৩০০০/৬৫০০ টাকা। ফোন ০১৯৮০০০৪৭৭৮, ০১৭১৩১৯০০১৩
  • ব্লু মেরিন রিসোর্ট (Blue Marine Resort): ভাড়া ২৫০০/৬০০ টাকা। ফোন ০১৭১৩-৩৯৯০০১, ০১৮১৭-০৬০০৬৫
  • প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্ট (Praasad Paradise Resort): ভাড়া ২৫০০/৬০০ টাকা। ফোন ০১৯৯৫-৫৩৯২৪৮, ০১৮৮৩-৬২৬০০৩
  • নীল দিগন্তে রিসোর্ট (Neel Digante Resort): ভাড়া ১৫০০/৫০০০ টাকা। ফোন ০১৭৩০-০৫১০০৪

আরো পড়তে পারেন সেন্ট মার্টিন এর সকল হোটেল, রিসোর্ট এবং কটেজ এর তথ্য।

সতর্কতা এবং টিপস

  • ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। কোরাল বা প্রবল তুলে সাথে নিয়ে আসবেন না।
  • জেটির কাছে উত্তর দিকের বীচের একটা জায়গা বেশি বিপদজনক। সেটি এড়িয়ে চলুন।
  • এখানে সব কিছু বাহিরে থেকে আসে। তাই খাবার খরচ একটু বেশি।
  • সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। সম্ভব হলে সাইকেলে চড়ে পুরা দ্বীপ ঘুরে দেখার চেষ্টা করুন।
  • ৩ দিনে জন প্রতি খরচ হবে ৫,০০০/৬,০০০ টাকা। তবে টিমের সাইজ বড় হলে ৩,০০০/৪,০০০ টাকায় ঘুরে আসতে পারবেন।
  • আগের থেকে হোটেল এবং কটেজের সংখ্যা বাড়ায় থাকা নিয়ে এখন খুব একটা সমস্যা হয় না।
  • খরচ কমাতে ছুটির দিন এড়িয়ে চলুন।

আরো দেখে নিতে পারেন সেন্টমার্টিন নিয়ে কমন কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর। আপনার ভ্রমণ সুন্দর এবং সহজ হউক।

4.1 8 ভোট
রেটিং

লেখক

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
1 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

1
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx