বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণের ট্যুর প্ল্যান

সেন্ট মার্টিন ট্যুর প্ল্যান

Loading

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
napittochara-trail-3
সেন্টমার্টিনে সাইক্লিং
napittochara-trail-3
জাহাজে উঠা
napittochara-trail-3
মাছের বার বি কিউ
Shadow

নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলা গাঙচিল সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে করেছে অনন্য। এই অপূর্ব সুন্দর প্রবাল দ্বীপ ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ কে বার বার কাছে টেনে আনে। ভালো একটি প্ল্যান আপনাকে স্বল্প সময়ে, কম খরচে পুরো সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কভার করতে সাহায্য করবে। আসুন দেখে নেই তেমন একটি ভালো মানের সেন্ট মার্টিন ট্যুর প্ল্যান ।

সেন্ট মার্টিন ট্যুর প্ল্যান

ইচ্ছে করলে সেন্ট মার্টিন এ আপনি লম্বা সময় থাকতে পারেন। বোরিং লাগবে না। তবে হাতে সময় কম থাকলে, তিন রাত দুই দিনে সেন্ট মার্টিনের সব কিছু মোটামোটি ভাবে ঘুরে আসা যায়। ৪ রাত ৩ দিন হলে সব থেকে ভালো। ট্যুর বেশ আরামদায়ক এবং উপভোগ্য হয়। সব কিছু সময় নিয়ে ভালো মতো ঘুরে দেখা যায়। ৩ রাত ২ দিনের সেন্ট মার্টিন ট্যুর প্ল্যান (Saint Martin Tour Plan) মোটামোটি এই রকম:

প্রথম দিন:

রাতে ঢাকা থেকে বাস রওনা দিয়ে সকালে টেকনাফ পৌঁছাবেন। জাহাজের টিকেট আগে থেকে না কেটে থাকলে প্রথেমেই টিকেট কেটে নিবেন। এর পর সকালের নাস্তা করে নিবেন। সকাল ৯ বা ৯:৩০ এ জাহাজ ছেড়ে দিবে। সেন্ট মার্টিন পৌঁছাবে ১২ টার দিকে। তাই সময়ের আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত না হতে পারলে জাহাজ মিস হবার সম্ভাবনা আছে।

টেকনাফ থেকে জাহাজ, ট্রলার বা স্পিড বোটে সেন্ট মার্টিন যাওয়া যায়। জাহাজে যাওয়াই সব থেকে নিরাপদ। প্রতিদিন বেশ কিছু জাহাজ টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে রুটে আসা-যাওয়া করে। তাদের মধ্যে কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ও গ্রীনলাইন ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য।

সেন্ট মার্টিনে বিভিন্ন মানের হোটেল এবং রিসোর্ট আছে। আপনার পছন্দমতো হোটেলে চেকইন করে হালকা বিশ্রাম করে চলে যাবেন উত্তর পূর্ব দিকের বিচে (হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ এর কাছে)। আপনার রুম থেকে পায়ে হেঁটে বা ভ্যানে করে যেতে পারেন। ১/২ ঘন্টা গোসল করে রুমে ফেরত এসে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে নিবেন। এর পর চলে যাবেন পশ্চিম দিকের বীচে। সন্ধ্যার সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে কাটাতে পারেন।

পায়ে হেঁটে বা সাইকেল ভাড়া করে পুরো দীপ চক্কর দিতে পারেন। পুরো সেন্ট মার্টিন দীপ কভার করতে ৩/৪ ঘন্টা লাগতে পারে। সময় না পেলে অন্তত হুমায়ন আহমেদের বাড়ি থেকে জেটি পর্যন্ত অবশ্যই যাবেন।

এখানে প্রচুর ফিশ ফ্রাই পাওয়া যায় ইচ্ছে মতো খেতে পারেন। আরো কিছু সময় বীচে অতিবাহিত করে ডিনার করে রুমে ফিরে আসবেন। চাইলে রাতে বার বি কিউ পার্টি করতে পারেন। তাহলে হোটেলে আগে থেকেই বলে রাখবেন। তারা ব্যবস্থা করে দিবে। এর পর ঘুমিয়ে পড়ুন।

দ্বিতীয় দিন:

অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে যাবেন ছেঁড়া দ্বীপ। সেন্ট মার্টিন এর জেটি থেকে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার স্পীড বোট ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার পাওয়া যায়। ভাড়া সাধারণত সিজনের উপর নির্ভর করে। জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকায় ছেঁড়া দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন।

পশ্চিম দিকের বিচ থেকেও যাওয়া যায়। ট্রলার নিয়ে সন্ধ্যার পর লোকজন হোটেলে এসে জিজ্ঞেস করে সকালে ছেঁড়া দ্বীপ যাবেন কিনা। জনপ্রতি ২০০/২৫০ টাকা করে নিবে। আর যদি হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে তবে পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল ভাড়া নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন। তবে অবশ্যই জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিবেন।

সাইকেল বা মোটর সাইকেল নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপে প্রবেশ করা যায় না। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের শেষ মাথায় মুদি দোকানে সাইকেল বা মোটর সাইকেল রাখার জায়গা আছে। ৪০/৫০ টাকা ভাড়া নিবে। সেখান থেকে পায়ে হেটে চলে যাবেন ছেঁড়া দ্বীপ।

ছেঁড়া দ্বীপে গোসলও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ছেঁড়া দ্বীপের মাঝামাঝি পশ্চিম দিকে গিয়ে পানিতে নামাই ভালো। নিশ্চুপ দ্বীপের ডান পাশটা নামার জন্য উপযুক্ত। এখানে কোরাল তুলনামুলক কম আর ঢেউ গুলো চমৎকার।

সকাল ১১ থেকে ১১:৩০ এর মধ্যে হোটেল থেকে চেক আউট করতে হয়। এ জন্য সব থেকে ভালো হয় ব্যাগ গুছিয়ে নিচে অভ্যর্থনা কক্ষে রেখে গেলে। তাহলে দেরি হলেও সমস্যা নাই। হোটেলে ফ্রেশ হবার আলাদা রুম থাকে। সেখানে ফ্রেশ হয়ে জাহাজের জন্য অপেক্ষা করবেন।

জাহাজ ছাড়বে ৩ টা থেকে ৩:৩০ এর মধ্যে। এর আগেই লাঞ্চ করে নিন। হাতে সময় থাকলে বীচের কাছে গিয়ে বসে থাকতে পারেন। তবে কোনো ভাবেই জাহাজ মিস করবেন না। তাহলে ট্রলার এ করে ফিরতে হবে।

টেকনাফ ফিরে রাতের বাসে ফিরে আসুন ঢাকা বা আপনার গন্তব্যে।

সেন্ট মার্টিন কিভাবে যাবেন

সেন্ট মার্টিন যেতে হলে প্রথমে আসতে হবে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ। রাজধানী ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফে যাওয়া যায়। ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। এদের মধ্যে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাসে সময় নিবে ১০/১২ঘন্টা। বাস ভাড়া ৯০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

অথবা ঢাকা থেকে বাস/প্লেনে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়া যায়। কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস, প্রাইভেট কার, জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যায়। সময় নিবে ২ ঘন্টা।

প্রতিদিন বেশ কিছু জাহাজ টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে রুটে আসা-যাওয়া করে। তাদের মধ্যে কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ও গ্রীনলাইন ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য। জাহাজগুলো সকাল ৯.০০ থেকে ৯.৩০ মিনিটে টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়। বিকাল ৩.০০ থেকে ৩.৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে যায়। তাই সময়ের আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত না হতে পারলে জাহাজ মিস হবার সম্ভাবনা আছে।

জাহাজের শ্রেনীভেদে আপ-ডাউন ভাড়া ৬৫০/১৬০০ টাকার মত। এছাড়া ট্রলার এবং স্পিডবোট দিয়েও যাওয়া যায় সেন্ট মার্টিন। ট্রলার ভাড়া ৮০০ টাকার মতো। অথবা জন প্রতি ১০০ টাকা করেও যেতে পারেন। তবে ট্রলারে যাওয়া লাইফ রিস্ক। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

4.6 8 ভোট
রেটিং

লেখক

Rashedul Alam; Rasadul Alam; founder of cybarlab.com; founder of trippainter.com; trippainter.com; cybarlab.com; Bangladeshi travel blogger; Bangladeshi blogger; Bangladeshi software engineer

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
3 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

3
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx