ষাট গম্বুজ মসজিদ (Shaṭ Gombuj Moshjid; Sixty Dome Mosque) বাংলাদেশের খুবই প্রাচীন এক মসজিদ। এটি পনেরো শতকে নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী খুবই চমৎকার। লাল পোড়া মাটির উপর বিভিন্ন রকমের নকশা করা মধ্য যুগীয় স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। এটি ইউনেস্কো ঘোষিত বাংলাদেশের তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মধ্যে একটি। বাকি ২ টি হলো সুন্দরবন এবং পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার।
ষাট গম্বুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিত
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের পাশে সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা থেকে এর দুরুত্ব প্রায় ২০৫ কিঃমিঃ এবং বাগেরহাট শহর থেকে ৭ কিঃমিঃ।
ষাট গম্বুজ মসজিদ কে নির্মান করেন
ষাট গম্বুজ মসজিদের গায়ে তেমন কোনো শিলালিপি বা নির্দেশনা নাই। তাই এটি কে, কখন নির্মাণ করেছিল সে সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মসজিদটির নির্মাণ শৈলী দেখে এটি যে খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন তা ধরে নেয়া যায়। ধারণা করা হয় তিনি ১৫শ শতাব্দীতে এটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করেছিলেন। এতে ব্যবহৃত পাথর গুলো আনা হয় ভারতের ঝাড়খণ্ড প্রদেশের রাজমহল থেকে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের নির্মাণ শৈলী
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। এর দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু। নাম ষাট গম্বুজ হলেও এর প্রকৃত গম্বুজের সংখ্যা ৮১ টি, সাত লাইনে ১১ টি করে ৭৭ টি এবং চার কোনায় ৪ টি। এটি মূলত চুন, সুরকি, কালো পাথর ও ছোট ইটের তৈরি। এটিতে ১০টি মেহরাব আছে। এর মধ্যে মূল মেহরাবটি পাথরের।
মসজিদের চার পাশে ভাল সবুজ খোলা জায়গা এবং বাগান রয়েছে। ডান পাশে অজুখানা, পিছনের দিকে উন্নতমানের টয়লেট এবং বিশাল একটি দীঘি রয়েছে। এখানে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা।
টিকেটের মূল্য
বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ২০ টাকা। আর বিদেশি পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ২০০ টাকা। তবে ৫ বছরে কম বাচ্চাদের জন্য কোনো টিকেট লাগেনা।
সময় সূচী
ষাট গম্বুজ মসজিদ নামাজ পড়ার জন্য সব সময় খোলা থাকে। তবে পর্যটকদের জন্য গ্রীষ্মকালে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৬ টা এবং শীতকালে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১ টা থেকে ৩০ মিনিটের বিরতি থাকে। শুক্র বারে জুম্মার নামাজের জন্য ১২:৩০ থেকে ৩ টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবি বার পুরা দিন বন্ধ থাকে এবং সোম বার দুপুর ২ টা থেকে খোলা থাকে।
ষাট গম্বুজ মসজিদ কিভাবে যাবেন
ষাট গম্বুজ মসজিদ যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে বাগেরহাট শহরে। সেখান থেকে অটোতে ষাট গম্বুজ মসজিদ। ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস বাগেরহাট শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। নন এসি বাস ভাড়া ৭০০ টাকা। এছাড়া ট্রেনে খুলনা এসে সেখান থেকে বাগেরহাট।
কোথায় থাকবেন
বাগেরহাট শহরে এসি/নন এসি বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। পছন্দ মতো যেকোন একটায় থাকতে পারেন। আরো আছে সরকারি গেস্টহাউস। এছাড়া খান জাহান আলী মাজার সংলগ্ন হাইওয়েতে বেশ কিছু হোটেল আছে। বাগেরহাট শহর থেকে খুলনা শহর মাত্র এক ঘন্টার পথ। চাইলে খুলনা এসেও থাকতে পারেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
সময় থাকলে দেখে যেতে পারেন আশেপাশের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।