ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী আর এপারে রক্তিম ফুলের সমারোহ নিয়ে শিমুল বাগান (Shimul Bagan)। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য। সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো শিমুল গাছে ফুটে থাকা লাল পাপড়ির শিমুল ফুল আপনাকে করবে মুগ্ধ। বাগানের উত্তর পাশ থেকে যাদুকাটা নদীর ভিউ খুবই অসাধারণ।
শিমুল বাগান কোথায় অবস্থিত
শিমুল বাগান বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বড়দল ইউনিয়নে যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১০০ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে এই বাগান বিস্তৃত। এর নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক যাদুকাটা নদীর তীরে ভীড় করে। নাটক সিনেমার শুটিং করতে পরিচালক, শিল্পীরাও এখানে ছুটে আসে।
শিমুল বাগানের ইতিহাস
তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, জয়নাল আবেদীন ২০০২ সালে এই শিমুল বাগান গড়ে তোলেন। জয়নাল আবেদীন যাদুকাটা নদীর পশ্চিম তীরে অনাবাদী ধু ধু বালিয়াড়িতে শখের বসে প্রায় ৩ হাজার শিমুল গাছের চারা রুপন করেন। মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে শিমুল গাছগুলো বড় হয়ে এখন হয়ে উঠেছে শিমুল বাগান। এটি জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান নামেও পরিচিত। এই বাগানের পাশে লেবুর বাগানও গড়ে উঠেছে।
শিমুল বাগান কখন যাবেন
শিমুল বাগান যাওয়ার সময় প্রধানত দুইটি। লাল লাল শিমুল ফুল দেখতে হলে আপনাকে ফাল্গুন মাসে যেতে হবে। শিমুল ফুল গাছে থাকে মাত্র ১৫/২০ দিন। এর পর ঝরে যায়। তাই ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখের মধ্যে যেতে হবে। অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে না যাওয়ার কারণে ফুল দেখতে পায়না।
আর বর্ষায় গেলে ঘন সবুজ শিমুল বাগান দেখতে পাবেন। তখন টাঙ্গুয়ার হাওর পানিতে সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ থাকে। তাই একসাথে নৌকায় টাঙ্গুয়া হাওর ভ্রমণ করে আসতে পারবেন।
শিমুল বাগান কিভাবে যাবেন
শিমুল বাগান যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। ঢাকার গাবতলী, পান্থপথ, আরামবাগ, ফকিরাপুল, সায়দাবাদ থেকে মামুন, হানিফ, শ্যামলী, এনা ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস সুনামগঞ্জ যায়। নন এসি বাসের ভাড়া ৮০০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। যেতে সময় নিবে প্রায় ৭ ঘন্টার মতো। সরাসরি কাউন্টার থেকে অথবা ওয়েব সাইট থেকে অনলাইনে বাসের টিকেট কাটা যায়।
সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা ব্রিজের উপর থেকে বারেক টিলা যাওয়ার সিএনজি এবং মোটর সাইকেল ভাড়ায় পাবেন। এক মোটর সাইকেলে দুইজন বসা যায়। মোটর সাইকেল ভাড়া নিবে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। যেতে সময় লাগবে দেড় ঘন্টার মতো। দরদাম করে আরো কমে পেতে পারেন। সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা।
সিএনজি বা মোটর সাইকেল আপনাকে যাদুকাটা নদীর সামনে নামিয়ে দিবে। ৫ টাকা দিয়ে নদী পার হয়ে ওইপাড়ে গেলেই বারেক টিলা। বারেক টিলায় গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই শিমুল বাগান দেখিয়ে দিবে। বারেক টিলা থেকে যাদুকাটা নদীর ভিউ অসাধারণ।
বিকেল পর্যন্ত বাগানে থেকে, ছবি তুলে, যাদুকাটা নদীর পারে সময় কাটিয়ে আবার বারেক টিলার সামনে থেকে সিএনজি বা মোটর সাইকেল নিয়ে সুনামগঞ্জ ফেরত চলে আসতে পারেন।
হাতে সময় থাকলে আরেকটা মোটর সাইকেল নিয়ে চলে যেতে পারেন তাহিরপুর উপজেলা সদর। যাবার পথে ট্যাকেরঘাট, নীলাদ্রি লেক ঘুরে যাবেন। রাতে এখানে থেকে সকালে মোটর সাইকেল বা ট্রলারে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে আসতে পারেন। বর্ষাকাল ছাড়া হাওরে পানি কম থাকলেও প্রচুর পাখি দেখতে পাবেন। তবে তাদের না খাওয়াই উত্তম।
টিকেটের মূল্য
প্রথম দিকে এই বাগানে ফ্রী যাওয়া যেত। তবে বর্তমানে শিমুল বাগানের প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা করা হয়েছে। এই টাকা বাগানের উন্নয়নে এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয়। বাগানের ভিতরে ১০০ টাকা দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে পুরো বাগান ঘুরে দেখা যায়। এছাড়া ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফার রয়েছে। সব কিছু অবশ্যই পূর্বে দরদাম করে নিবেন।
কোথায় থাকবেন
শিমুল বাগানের আশেপাশে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল নেই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুইটি হোটেল রয়েছে। শুকনো মৌসুমে গেলে রাতে সুনামগঞ্জ শহরে থাকাই ভালো। আর বর্ষাকালে গেলে নৌকায় থাকতে পারেন।
বড়ছড়া বাজারে গেস্ট হাউজ ভাড়া জনপ্রতি ২০০/৪০০ টাকা। আর সুনামগঞ্জ শহরে হোটেল ভাড়া ২০০/১,০০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
বারেক টিলাতে খাবারের হোটেল আছে। সেখানে খেতে পারেন। এছাড়া টেকেরঘাট বাজার, বড়ছড়া বাজার, তাহিরপুর বাজারে মোটামোটি মানের খাবারের দোকান আছে। তবে ভালো রেস্টুরেন্টে এর জন্য সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। আর বর্ষায় নৌকা ভাড়া নিলে নৌকায় রান্নার ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে নৌকায় উঠার আগে বাজার করে নিতে হবে।
শিমুল বাগানের কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান
শিমুল বাগানের কাছাকাছি আছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। প্ল্যান করে হাতে ২ দিন সময় নিয়ে গিয়ে এক সাথে সব গুলো দেখে আসতে পারেন।
- টাঙ্গুয়া হাওর
- নীলাদ্রি লেক
- যাদুকাটা নদী
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।