
সিকিম ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য। এটি আয়তনে ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম প্রদেশ। বাংলাদেশ থেকে সহজে এবং কম খরচে সিকিম ভ্রমণ করা যায়। তাই বাংলাদেশী পর্যটকদের কাছে এটি খুবই পছন্দের। আসুন দেখে নেই সিকিম ট্যুর প্ল্যান (Sikkim Tour Plan)।
সিকিম কখন যাবেন
ফেব্রুয়ারি থেকে মে এবং সেপ্টম্বর থেকে নভেম্বর মাস সিকিম ভ্রমণের সব থেকে ভালো সময়। শীতকালে বরফ পরে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় পাহাড় ধস হয়। এছাড়া বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তা বন্ধ থাকে। তখন সব জায়গায় যাওয়া যায় না। উত্তর এবং পূর্ব সিকিম ভ্রমণের সব থেকে ভালো সময় হলো: ফেব্রুয়ারি থেকে মে এবং সেপ্টম্বর থেকে নভেম্বর মাস। দক্ষিণ এবং পশ্চিম সিকিম সারা বছর যাওয়া যায়।গ্যাংটক যে কোনো সময় যাওয়া যায়।
সিকিম এর দর্শনীয় স্থান
সিকিমে আছে ভারতের সর্বোচ্চ ও পৃথিবীর তৃতীয় পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। যা এখানকার জীববৈচিত্র্যকে আরো সুন্দর করে সাজিয়েছে। ছোট বড় পাহাড়-পর্বত, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, সবুজ প্রকৃতি, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আর তুষারপাতের কারণে সিকিম পর্যটকদের কাছে একটি স্বর্গরাজ্য। সিকিমের এই রুপ ঐশ্বর্যের জন্য অনেকে একে বলে “সুখী স্বদেশ”। উত্তর সিকিম, দক্ষিণ সিকিম, পূর্ব সিকিম, এবং পশ্চিম সিকিম এই চার জেলা নিয়ে সিকিম গঠিত। প্রতিটি জেলাতেই আছে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা।
উত্তর সিকিম
উত্তর সিকিমের দর্শনীয় স্থানগুলো হলো লাচুং, ইয়ুমথাং ভ্যালি, কাটাও, কালা পাথার, জিরো পয়েন্ট, লাচেন, গুরুদংমার লেক ইত্যাদি।
দক্ষিণ সিকিম
দক্ষিণ সিকিমের দর্শনীয় স্থানগুলো হলো নামচি, সিকিপ, টেমি টি গার্ডেন, রাবাংলা, বোরং, রিনচেনপং, কালুক ইত্যাদি।
পূর্ব সিকিম
পূর্ব সিকিমের দর্শনীয় স্থানগুলো হলো গ্যাংটক, ছাঙ্গু লেক, নাথাং ভ্যালি, কুপাপ লেক, নাথুলা, ঋষিখোলা, আরিতার, জুলুক ইত্যাদি। বাংলাদেশ সহ বিদেশীদের নাথুলা যাবার পারমিশন নাই।
পশ্চিম সিকিম
পশ্চিম সিকিমের দর্শনীয় স্থানগুলো হলো পেলিং, ভার্সে, ওখড়ে, গেজিং, হি-বারমিওক, ইয়াকসাম, কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস, খেছিপরি লেক ইত্যাদি।
সিকিম কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে সড়ক পথে সিকিম যাওয়ায় যায়। সব থেকে সহজ পথ হলো ঢাকা থেকে বাস অথবা ট্রেনে শিলিগুঁড়ি এসে সেখান থেকে গ্যাংটক যাওয়া। যারা বাসে যাবেন তারা বাংলাবান্ধা অথবা বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে যাবেন। এর জন্য আপনাকে ফুলবাড়ী অথবা চেংড়াবান্দা পোর্ট উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান ভিসা নিতে হবে। আর ট্রেনে গেলে জলপাইগুড়ি উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান ভিসা নিতে হবে।
ঢাকা থেকে বেশ কিছু বাস পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধা যায়। বর্ডারে ইমিগ্রেশন শেষ করে অটো দিয়ে চলে যাবেন শিলিগুড়ি। এটি সব থেকে সহজ পথ। ঢাকা থেকে কিছু বাস বুড়িমারী বর্ডারে যায়। সেখানে ইমিগ্রেশন শেষ করে জিপ অথবা বাসে চলে যাবেন শিলিগুড়ি। শ্যামলী পরিবহনের বাস ঢাকা থেকে সরাসরি বুড়িমারী হয়ে শিলিগুড়ি যায় এবং সেখান থেকে ঢাকা আসে। এছাড়া ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশন থেকে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন জলপাইগুড়ি যায়। পরে সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাবেন শিলিগুড়ি।
শিলিগুড়ি পৌঁছে Sikkim Nationalized Tranport (SNT) থেকে সিকিম যাবার পারমিশন নিতে হবে। এই পারমিশন গ্যাংটক এর ৪০/৫০ কিলোমিটার আগে রংপোক থেকেও নেয়া যায়। রংপোক থেকে নেয়াই ভালো। শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক এর দুরুত্ব প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগে ৬ ঘন্টা। শিলিগুড়ির সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্ট (SNT) বাস টার্মিনাল কিংবা NJP স্টেশন থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া নিয়ে গ্যাংটক যাওয়া যায়। বাস ভাড়া ১২০ রুপি। শেয়ার জিপ ভাড়া ৩৫০/৪০০ রুপি। রিজার্ভ ভাড়া ৪,০০০ রুপি।
জিপ ভাড়া নেয়ার সময় সিকিমের নাম্বার প্লেটযুক্ত গাড়ি নিবেন। তাহলে ভাড়া কম নিবে এবং গ্যাংটক এর মেইন জায়গায় নামতে পারবেন। নাহলে নেমে আবার ট্যাক্সি নিতে হবে।
সিকিম ট্যুর প্ল্যান
সিকিম ভালো ভাবে উপভোগ করার জন্য ৭ রাত ৫ দিন প্রয়োজন। তবে হাতে সময় কম থাকলে ছয় রাত পাঁচ দিনেও সিকিম কভার করা যায়। ৭ রাত ৫ দিনের সিকিম ট্যুর প্ল্যান মোটামোটি এইরকম:
প্রথম দিন:
রাতের বাসে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে সন্ধ্যায় গ্যাংটক পৌঁছাবেন। গ্যাংটক শহরে রাত্রিযাপন। হোটেলে চেকইন করে বাহিরে যেকোনো রেস্টুরেন্টে এ রাতের খাবার খেয়ে নিবেন। গ্যাংটকে রাত ৮ টার মধ্যে সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। তাই এর আগেই খাবার খেয়ে নিবেন অথবা পার্সেল নিয়ে নিবেন।
দ্বিতীয় দিন:
সকালে নাস্তা করে গ্যাংটক শহর ভ্রমণ করবেন। গ্যাংটক শহরের কাছাকাছি বেশ কিছু ট্যুরিস্ট স্পট আছে। ট্যাক্সি ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। পার্কিং বিল আপনি দিবেন তা আগেই ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলে নিবেন। কয়েকটি এজেন্সিতে যাচাই করে পরের দিন নর্থ সিকিম যাবার প্যাকেজ এবং পারমিশন নিয়ে নিবেন। রাতে গ্যাংটকে রাত্রিযাপন।
তৃতীয় দিন:
সকাল ৭ টার মধ্যে আগের দিন ঠিক করা গাড়ি দিয়ে নর্থ সিকিমের লাচুং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। রাতে লাচুং এ রাত্রিযাপন করবেন।
চতুর্থ দিন:
সকালে নাস্তা করে লাচুং থেকে চলে যাবেন ইয়ুমথাং ভ্যালি, জিরো পয়েন্ট। সেখান থেকে গ্যাংটক এসে হোটেলে রাত্রিযাপন করবেন।
পঞ্চম দিন:
সকালে নাস্তা করে গ্যাংটক থেকে চলে যাবেন পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু লেক। গ্যাংটক ফিরে পুনরায় চলে আসবেন শিলিগুড়ি। পরে সেখান থেকে বর্ডার পার হয়ে সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবেন বাংলাদেশ। বর্ডার থেকে রাতের বাসে চলে আসবেন ঢাকা।
লেখক
আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ট্রাভেল ফটোগ্রাফার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে ভীষণ ভালোবাসি। নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করার চেষ্টা করি।