বিদেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণের ট্যুর প্ল্যান

সিকিম ট্যুর প্ল্যান

Loading

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
napittochara-trail-3
জিরো পয়েন্ট
napittochara-trail-3
নর্থ সিকিম
napittochara-trail-3
গ্যাংটক শহর
Shadow

সিকিম ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য। এটি আয়তনে ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম প্রদেশ। বাংলাদেশ থেকে সহজে এবং কম খরচে সিকিম ভ্রমণ করা যায়। তাই বাংলাদেশী পর্যটকদের কাছে এটি খুবই পছন্দের। আসুন দেখে নেই সিকিম ট্যুর প্ল্যান (Sikkim Tour Plan)।

সিকিম কখন যাবেন

ফেব্রুয়ারি থেকে মে এবং সেপ্টম্বর থেকে নভেম্বর মাস সিকিম ভ্রমণের সব থেকে ভালো সময়। শীতকালে বরফ পরে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় পাহাড় ধস হয়। এছাড়া বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তা বন্ধ থাকে। তখন সব জায়গায় যাওয়া যায় না। উত্তর এবং পূর্ব সিকিম ভ্রমণের সব থেকে ভালো সময় হলো: ফেব্রুয়ারি থেকে মে এবং সেপ্টম্বর থেকে নভেম্বর মাস। দক্ষিণ এবং পশ্চিম সিকিম সারা বছর যাওয়া যায়।গ্যাংটক যে কোনো সময় যাওয়া যায়।

সিকিম এর দর্শনীয় স্থান

সিকিমে আছে ভারতের সর্বোচ্চ ও পৃথিবীর তৃতীয় পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। যা এখানকার জীববৈচিত্র্যকে আরো সুন্দর করে সাজিয়েছে। ছোট বড় পাহাড়-পর্বত, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, সবুজ প্রকৃতি, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ আর তুষারপাতের কারণে সিকিম পর্যটকদের কাছে একটি স্বর্গরাজ্য। সিকিমের এই রুপ ঐশ্বর্যের জন্য অনেকে একে বলে “সুখী স্বদেশ”। উত্তর সিকিম, দক্ষিণ সিকিম, পূর্ব সিকিম, এবং পশ্চিম সিকিম এই চার জেলা নিয়ে সিকিম গঠিত। প্রতিটি জেলাতেই আছে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা।

উত্তর সিকিম

উত্তর সিকিমের দর্শনীয় স্থানগুলো হলো লাচুং, ইয়ুমথাং ভ্যালি, কাটাও, কালা পাথার, জিরো পয়েন্ট, লাচেন, গুরুদংমার লেক ইত্যাদি।

দক্ষিণ সিকিম

দক্ষিণ সিকিমের দর্শনীয় স্থানগুলো হলো নামচি, সিকিপ, টেমি টি গার্ডেন, রাবাংলা, বোরং, রিনচেনপং, কালুক ইত্যাদি।

পূর্ব সিকিম

পূর্ব সিকিমের দর্শনীয় স্থানগুলো হলো গ্যাংটক, ছাঙ্গু লেক, নাথাং ভ্যালি, কুপাপ লেক, নাথুলা, ঋষিখোলা, আরিতার, জুলুক ইত্যাদি। বাংলাদেশ সহ বিদেশীদের নাথুলা যাবার পারমিশন নাই।

পশ্চিম সিকিম

পশ্চিম সিকিমের দর্শনীয় স্থানগুলো হলো পেলিং, ভার্সে, ওখড়ে, গেজিং, হি-বারমিওক, ইয়াকসাম, কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস, খেছিপরি লেক ইত্যাদি।

সিকিম কিভাবে যাবেন

বাংলাদেশ থেকে সড়ক পথে সিকিম যাওয়ায় যায়। সব থেকে সহজ পথ হলো ঢাকা থেকে বাস অথবা ট্রেনে শিলিগুঁড়ি এসে সেখান থেকে গ্যাংটক যাওয়া। যারা বাসে যাবেন তারা বাংলাবান্ধা অথবা বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে যাবেন। এর জন্য আপনাকে ফুলবাড়ী অথবা চেংড়াবান্দা পোর্ট উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান ভিসা নিতে হবে। আর ট্রেনে গেলে জলপাইগুড়ি উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান ভিসা নিতে হবে।

ঢাকা থেকে বেশ কিছু বাস পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধা যায়। বর্ডারে ইমিগ্রেশন শেষ করে অটো দিয়ে চলে যাবেন শিলিগুড়ি। এটি সব থেকে সহজ পথ। ঢাকা থেকে কিছু বাস বুড়িমারী বর্ডারে যায়। সেখানে ইমিগ্রেশন শেষ করে জিপ অথবা বাসে চলে যাবেন শিলিগুড়ি। শ্যামলী পরিবহনের বাস ঢাকা থেকে সরাসরি বুড়িমারী হয়ে শিলিগুড়ি যায় এবং সেখান থেকে ঢাকা আসে। এছাড়া ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশন থেকে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন জলপাইগুড়ি যায়। পরে সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাবেন শিলিগুড়ি।

শিলিগুড়ি পৌঁছে Sikkim Nationalized Tranport (SNT) থেকে সিকিম যাবার পারমিশন নিতে হবে। এই পারমিশন গ্যাংটক এর ৪০/৫০ কিলোমিটার আগে র‍্যাংপো থেকেও নেয়া যায়। ঝামেলা এড়াতে SNT থেকে নেয়াই ভালো। শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক এর দুরুত্ব প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগে ৬ ঘন্টা। শিলিগুড়ির সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্ট (SNT) বাস টার্মিনাল কিংবা NJP স্টেশন থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া নিয়ে গ্যাংটক যাওয়া যায়। বাস ভাড়া ১২০ রুপি। শেয়ার জিপ ভাড়া ৩৫০/৪০০ রুপি। রিজার্ভ ভাড়া ৪,০০০ রুপি।

জিপ ভাড়া নেয়ার সময় সিকিমের নাম্বার প্লেটযুক্ত গাড়ি নিবেন। তাহলে ভাড়া কম নিবে এবং গ্যাংটক এর মেইন জায়গায় নামতে পারবেন। নাহলে নেমে আবার ট্যাক্সি নিতে হবে।

সিকিম ট্যুর প্ল্যান

সমগ্র সিকিম ভ্রমণের জন্য ৮/১০ দিন সময় প্রয়োজন। বাংলাদেশীদের জন্য সব জায়গায় যাবার পারমিশন নাই। তাই সবাই সাধারণত উত্তর সিকিম এবং পূর্ব সিকিম ভ্রমণ করে। আর এই দুই এলাকা ভ্রমণ করলেই মোটামোটি ভাবে সিকিম ভ্রমণ করা হয়ে যায়। উত্তর-পূর্ব সিকিম ভালো ভাবে উপভোগ করার জন্য ৭ রাত ৫ দিন প্রয়োজন। তবে হাতে সময় কম থাকলে ৬ রাত ৪ দিনেও সিকিম কভার করা যায়। সেক্ষেত্রে ছাঙ্গু লেক বা গ্যাংটক সাইটসিং বাদ দিতে হবে। ৭ রাত ৫ দিনের সিকিম ট্যুর প্ল্যান মোটামোটি এইরকম:

প্রথম দিন:

রাতের বাসে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে সন্ধ্যায় গ্যাংটক পৌঁছাবেন। গ্যাংটক শহরে রাত্রিযাপন করবেন। হোটেলে চেকইন করে বাহিরে যেকোনো রেস্টুরেন্টে এ রাতের খাবার খেয়ে নিবেন। গ্যাংটকে রাত ৯ টার মধ্যে সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। তাই এর আগেই খাবার খেয়ে নিবেন অথবা পার্সেল নিয়ে নিবেন।

দ্বিতীয় দিন:

সকালে নাস্তা করে গ্যাংটক শহর ভ্রমণ করবেন। গ্যাংটক শহরের কাছাকাছি বেশ কিছু ট্যুরিস্ট স্পট আছে। ট্যাক্সি ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। পার্কিং বিল আপনি দিবেন তা আগেই ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলে নিবেন। কয়েকটি এজেন্সিতে যাচাই করে পরের দিন নর্থ সিকিম যাবার প্যাকেজ এবং পারমিশন নিয়ে নিবেন। রাত ৯ টার মধ্যে সব কিছু শেষ করবেন। রাতে গ্যাংটকে রাত্রিযাপন করবেন।

প্যাকেজ গুলো সাধারণত ১ রাত ২ দিনের হয়। তবে চাইলে ২ রাতও থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ বাড়বে। এই প্যাকেজের মধ্যে থাকবে আসা যাওয়ার গাড়ি ভাড়া, নর্থ সিকিমে থাকার হোটেল ভাড়া এবং খাবার খরচ। প্যাকেজের মধ্যে উনারা আপনাকে ইয়ুমথাং ভ্যালি পর্যন্ত নিয়ে যাবে। জিরো পয়েন্ট বা কাটাও যেতে চাইলে ড্রাইভারের সাথে কথা বলে তাকে ৪০০/৫০০ রুপি অতিরিক্ত দিয়ে যেতে হবে।

তৃতীয় দিন:

সকাল সকাল নাস্তা করে আগের দিন ঠিক করা গাড়ি দিয়ে নর্থ সিকিমের লাচুং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। নর্থ সিকিমের গাড়িগুলো ভাজরা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে সকাল ১০ টার মধ্যে ছাড়ে। ব্যাগ, লাগেজ এজেন্সিতে রেখে যেতে পারেন। অথবা পরের দিন গ্যাংটকে এসে যে হোটেলে থাকবেন সেখানেও রেখে যেতে পারেন।

যাবার পথে বেশ কিছু ট্যুরিস্ট স্পটে ড্রাইভার গাড়ি থামাবে। সেগুলো ভিজিট করবেন। এজেন্সির ঠিক করা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাবেন। রাতে লাচুং এ রাত্রিযাপন করবেন। সেই হোটেলেই রাতের খাবার খাবেন। অনেক হোটেলে সন্ধ্যায় নাস্তা দিয়ে থাকে।

চতুর্থ দিন:

সকালে নাস্তা করে লাচুং থেকে চলে যাবেন ইয়ুমথাং ভ্যালি, জিরো পয়েন্ট। নাস্তায় সাধারণত ব্রেড, জেলি, বাটার থাকে। সময় বাঁচাতে অনেক সময় ড্রাইভার নাস্তা সাথে নিয়ে নেয়। সুবিধামতো কোথাও ব্রেক করে নাস্তা খেয়ে নিবেন। পুনরায় হোটেলে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে গ্যাংটক এর উদ্দেশে যাত্রা করবেন। গ্যাংটক এসে হোটেলে রাত্রিযাপন করবেন। গ্যাংটক ফিরে কোনো এজেন্সি থেকে পরের দিন ছাঙ্গু লেক যাবার প্যাকেজ নিবেন।

পঞ্চম দিন:

সকালে নাস্তা করে গ্যাংটক থেকে চলে যাবেন পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু লেক। ছাঙ্গু লেক যাবার গাড়ি ভাজরা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে সকাল ৯ টার মধ্যে ছাড়ে। গ্যাংটক ফিরে লাঞ্চ করে পুনরায় চলে আসবেন শিলিগুড়ি। পরে সেখান থেকে বর্ডার পার হয়ে সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবেন বাংলাদেশ। বর্ডার থেকে রাতের বাসে চলে আসবেন ঢাকা। কোনো কারণে দেরি হলে শিলিগুড়িতে রাত্রিযাপন করতে পারেন।

সিকিম ট্যুর প্ল্যান নিয়ে কিছু টিপস

  • শীতকালে সিকিম ভ্রমণ করা সব থেকে ভালো
  • সম্ভব হলে প্রথম রাতের জন্য ঢাকা থেকে হোটেল বুকিং দিয়ে আসবেন।
  • সিকিমে রাত ৯ টার মধ্যে বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যায়।
  • যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা নিষেধ।
  • সাথে ভালো মানের জ্যাকেট, মোজা, কানটুপি, হ্যান্ড গ্লাভস, ইনার নিবেন।
  • সিকিমের কোনো প্যাকেজ শিলিগুড়ি থেকে নিবেন না। গ্যাংটক থেকে নিবেন।
  • শিলিগুড়ি এসএনটি থেকে সিকিম ভ্রমণ এর পারমিশন নিবেন।
  • নর্থ সিকিম, সাঙ্গু লেক যাবার সময় গাড়িতে ড্রাইভার ছাড়াও অতিরিক্ত একজন গাইড নিতে হয়।
  • ভিসা, কোভিড ভ্যাক্সিন সনদের কপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি সাথে নিবেন(৭/৮ কপি)।
  • চাকরিজীবী হলে অফিস থেকে ১ কপি NOC নিবেন।
  • আসা এবং যাওয়া পথে র‍্যাংপো পুলিশ চেকপোস্ট থেকে পাসপোর্টে এন্ট্রি এবং এক্সিট সিল অবশ্যই নিবেন।
4.7 3 ভোট
রেটিং

লেখক

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
3 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

3
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx