পাহাড়, সমুদ্র, ঝর্ণা, ট্রেইল, লেক সব কিছুর এক অপূর্ব সংমিশ্রণ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। তাই সীতাকুণ্ড ভ্রমণ এখন পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় এবং রোমাঞ্চকর। বর্ষাকাল এলেই এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরা ছুটে চলেন সীতাকুন্ড। আসুন দেখে নেই সীতাকুণ্ড ট্যুর প্ল্যান (Sitakunda Tour Plan), যা আপনার ভ্রমণকে আরো সুন্দর এবং আরামদায়ক করবে।
সীতাকুণ্ড কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা ভাবে সীতাকুণ্ড আসা যায়। ঢাকা থেকে শ্যামলী, হানিফ, এস.আলম, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির বাস আসে চট্টগ্রাম। যে কোনো বাসে উঠে সীতাকুন্ড বাজারে নেমে যাবেন। ভাড়া নিবে নন এসি বাসে ৬৮০ টাকা। এসি বাসে ৮৫০ থেকে ১৬০০ টাকা। অবশ্যই বাসের সুপারভাইজারকে আগে থেকে বলে রাখবেন আপনি সীতাকুন্ড বাজারে নামবেন।
চট্টগ্রাম শহর থেকেও আসতে পারেন সীতাকুন্ড। চট্টগ্রামের অলংকার মোড়, এ কে খান মোড়, কদমতলী থেকে ফেনী গামী বাসে উঠে চলে আসবেন সীতাকুন্ড। ভাড়া ৮০/১০০ টাকা। এছাড়া প্রাইভেট কার, সিএনজি রিজার্ভ করেও আসতে পারেন। সিএনজি ভাড়া ২৫০/৩০০ টাকা। এছাড়া ফেনী এসে সেখান থেকে চট্টগ্রাম গামী বাসে উঠে আসতে পারেন সীতাকুন্ড।
সীতাকুন্ডের দর্শনীয় স্থান
সীতাকুণ্ড এলাকায় অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান আছে। সব গুলো স্থান মোটামোটি কাছাকাছি হওয়াতে এক দিনে বেশ কয়েকটা ঘুরে দেখা যায়। তবে দুই দিন সময় নিয়ে আসলে প্রায় সব গুলো স্থান ঘুরে দেখা যায়। বর্তমানে সীতাকুণ্ডের জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট গুলো হলো:
- সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
- চন্দ্রনাথ পাহাড়
- সুপ্তধারা ঝর্ণা
- সহস্রধারা ঝর্ণা
- কমলদহ ঝর্ণা
- ঝরঝরি ঝর্ণা
- সুপ্তধারা সহস্রধারা ট্রেইল
- হরিণমারা হাটুভাঙ্গা ট্রেইল
- বাঁশবাড়িয়া বীচ
- গুলিয়াখালি বীচ
- কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরী ঘাট
সীতাকুণ্ড ট্যুর প্ল্যান
সীতাকুণ্ড এলাকার সব গুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে বেশ কয়েকদিন প্রয়োজন। তবে হাতে সময় কম থাকলে তিন রাত দুই দিনে সীতাকুণ্ডের জনপ্রিয় স্থান গুলো ঘুরে দেখা যায়। ৩ রাত ২ দিনের সীতাকুণ্ড ট্যুর প্ল্যান মোটামোটি এইরকম:
প্রথম দিন:
রাতের বাসে রওনা দিয়ে সকালে সীতাকুন্ড পৌঁছাবেন। পৌঁছে পছন্দমতো হোটেলে চেকইন করবেন। সকালের নাস্তা করে সিএনজি নিয়ে প্রথমেই চলে যাবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়। সিএনজি ভাড়া ১০০/১৫০ টাকা। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার ২ পথ। বাম দিকের পথ দিয়ে উঠে ডান দিকের পথ দিয়ে নেমে আসবেন। পাহাড়ে উঠতে ১ ঘন্টার মতো সময় নিবে। নেমে আসতে ৩০ মিনিট সময় লাগবে। উঠার আগে নিচ থেকে একটা বাঁশের লাঠি ভাড়া নিয়ে নিবেন। সাথে ১/২ লিটার পানি নিতে পারেন।
দুপুর ১২ টার মধ্যে সীতাকুন্ড বাজারে চলে আসবেন। বাজার থেকে সিএনজি ভাড়া করে চলে যাবেন সহস্রধারা সেচ প্রকল্প। সিএনজি থেকে নেমে সহস্রধারা সেচ প্রকল্পের ভিতরে লেকের কাছে পায়ে হেটে আসতে ২০/২৫ মিনিট সময় লাগবে। লেক থেকে ৬০ টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে চলে যাবেন সহস্রধারা ২ ঝর্ণা।
সহস্রধারা ঝর্ণা থেকে দুপুর ৩ টার মধ্যে চলে আসবেন সীতাকুন্ড বাজারে। এসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন।
এর পর সীতাকুন্ড বাজার থেকে সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন গুলিয়াখালী সী বিচ। সিএনজি ভাড়া ২০০ টাকা। সিএনজি থেকে নেমে ২০/২৫ মিনিট কাঁদা পেরিয়ে পৌঁছে যাবেন গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে থেকে চলে আসুন সীতাকুন্ড বাজারে। রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ঘুমিয়ে পড়ুন।
দ্বিতীয় দিন:
সকালে নাস্তা করে চলে যাবেন সীতাকুন্ড ইকো পার্ক। ইকো পার্কের ভিতরে সুপ্তধারা ঝর্ণা, সহস্রধারা ঝর্ণা, সুপ্তধারা সহস্রধারা ট্রেইল আছে। সব কিছু দেখে বাসে চলে আসবেন আপনার বাসায়।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।