সারি সারি চা-বাগান, ঘন অরণ্য, নানা ধরনের ফলের বাগান, পাহাড়-টিলা, সবুজ প্রকৃতি আর নীল জলরাশির হাওর মিলিয়ে শ্রীমঙ্গল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার আধার। এখানকার স্নিগ্ধ পরিবেশ, পাখির কলতান আর চারদিকে ছড়ানো সবুজের ছোঁয়া আপনাকে মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত শ্রীমঙ্গলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এখানে আসলে আপনি দার্জিলিংয়ের ফ্লেভার অনুভব করবেন। আসুন দেখে নেই শ্রীমঙ্গল ট্যুর প্ল্যান (sreemangal tour plan), যা আপনার ভ্রমণকে আরো সুন্দর এবং আরামদায়ক করবে।
শ্রীমঙ্গল এর দর্শনীয় স্থান
শ্রমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানগুলো হলো: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধপুর লেক, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হামহাম ঝর্ণা, বাইক্কা বিল, নীলকণ্ঠের সাত রংয়ের চা, ৭১ এর বদ্ধভূমি, চা বাগান, রাবার বাগান, দার্জিলিং টিলা, নুরজাহান টি গার্ডেন, গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট, চা গবেষণা কেন্দ্র, চা মিউজিয়াম ইত্যাদি।
শ্রীমঙ্গল কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল বাস ও ট্রেন — উভয় মাধ্যমে যাওয়া যায়। প্রতিদিন আরামবাগ, সায়দাবাদ, ফকিরাপুল, পান্থপথ, উত্তরা এবং গাবতলী থেকে এনা, হানিফ, শ্যামলী, বিলাসসহ বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি ও নন-এসি বাস ঢাকা-শ্রীমঙ্গল রুটে চলাচল করে। ভাড়া প্রায় ৫৭০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত, এবং যাত্রায় সময় লাগে গড়ে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা। সম্ভব হলে রাত ১২টার দিকের বাস ধরার চেষ্টা করুন, তাহলে সকালে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে সারাদিন ঘুরে দেখতে বেশি সময় পারবেন।
এছাড়া সিলেটগামী ট্রেনে চড়েও শ্রীমঙ্গল আসা যায়। ভাড়া প্রায় ২৭৫ থেকে ৯৩৫ টাকা, ট্রেনের শ্রেণি অনুযায়ী ভাড়া বিভিন্ন রকমের হয়। তবে ট্রেনের টিকেট অনেক সময় পাওয়া যায় না। তাই সম্ভব হলে যাত্রার কয়েকদিন আগে টিকেট কেটে রাখবেন।
শ্রীমঙ্গল ট্যুর প্ল্যান
শ্রীমঙ্গল বেশ বড় জায়গা এবং এখানে রয়েছে অনেক সুন্দর ও আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। প্রতিটি স্থানই দেখার মতো, এবং সবগুলো না দেখলে আপনার ট্যুরটি হয়তো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তবে সমস্যা হলো—সবকিছু ঘুরে দেখতে কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। কিন্তু সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে আসলে মাত্র ২ দিন এবং ১ রাতেই শ্রীমঙ্গলের অধিকাংশ দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা সম্ভব। একটি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর ২ দিন ১ রাতের শ্রীমঙ্গল ট্যুর প্ল্যান মোটামুটি এমন হতে পারে:
প্রথম দিন
বাসা থেকে রাতে রওনা দিয়ে সকালে শ্রীমঙ্গল শহরে পৌঁছাবেন। শ্রীমঙ্গল পৌঁছে প্রথমেই পছন্দমতো হোটেলে বা রিসোর্টে চেকইন করে নিন। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিন। এর পর প্রথমেই চলে যাবেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এখানে ২ ঘন্টা থেকে চলে যাবেন নুরজাহান টি গার্ডেন। টি গার্ডেনে ১ ঘন্টা থেকে ফেরার পথে নীলকণ্ঠ টি কেবিন এ সাত রঙের চা পান করতে পারেন।
দুপুর ২ টার মধ্যে দুপুরে খাবার খেয়ে চলে যাবেন মাধবপুর লেক। লেকে ১ ঘন্টা ঘুরাঘুরি করে চলে যাবেন দার্জিলিং টিলা। হোটেলে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিন। ইচ্ছে করলে শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন থেকে ঘুরে আসতে পারেন। স্টেশন এ চা কিনতে পাওয়া যায়। বাসার লোকদের জন্য কয়েক কেজি কিনে নিতে পারেন।
দ্বিতীয় দিন
সকাল ৬:৩০ এর মধ্যে নাস্তা শেষ করে হামহাম ঝর্ণা দেখার জন্য রওনা দিন। যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। শ্রীমঙ্গল শহরে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। এর পর চা গবেষণা কেন্দ্র ও চা মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে পারেন। লোকাল মার্কেট থেকে বাসার জন্য চা কিনতে পারেন। অথবা হাতে সময় থাকলে পাখি ও প্রকৃতি উপভোগ করতে যেতে পারেন বাইক্কা বিল। সব ঘুরাঘুরি শেষ করে রাতের বাসে বাসায় ফিরে আসুন।
শ্রীমঙ্গল ট্যুর প্ল্যান এর কিছু টিপস
- ভারী ব্যাগ হোটেলে রেখে বাহিরে বের হবেন।
- চলাফেলার সুবিধার্থে সঙ্গে হালকা ব্যাগপ্যাক রাখুন।
- ব্যাগে কিছু শুকনো খাবার ও পানি নিয়ে নিবেন।
- হাঁটার জন্য আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন।
- বাস/ট্রেনের টিকিট ও হোটেল আগেই বুক করে রাখবেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।