সুবর্ণগ্রাম রিসোর্ট (Subornogram Resort) ঢাকার নিকটবর্তী এক চমৎকার স্থান, যেখানে পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে প্রকৃতির মাঝে নিরিবিলি সারা দিন কাটানো যায়। বিশাল লেকের চারপাশে সাজানো নানা রকম সুবিধা নিয়ে গড়ে ওঠা এই রিসোর্টটি আপনাকে অনেকটা ইতালির ভেনিস শহরের অনুভূতি দিবে। লেকের শান্ত পানিতে ভেসে বেড়ানো, ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে প্রকৃতি উপভোগ, এবং কিছু আধুনিক রাইডের সমন্বয়ে এটি একটি চমৎকার গন্তব্য।
সুবর্ণগ্রাম রিসোর্ট কোথায় অবস্থিত
সুবর্ণগ্রাম অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এন্ড রিসোর্ট বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার উপগঞ্জ উপজেলার মাহনা গ্রামে অবস্থিত। বাংলাদেশের সব থেকে বড় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট গাউসিয়া মার্কেটের কাছে মাহনা এবং সাওঘাট গ্রামের সংযোগ স্থানে এর অবস্থান। রিসোর্টটি ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দুরুত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। গাউসিয়া থেকে ১.৫ কিলোমিটার। কাঞ্চন ব্রীজ থেকে ৯ কিলোমিটার।
গুগল ম্যাপ লোকেশন: এখানে ক্লিক করুন।
কি আছে সুবর্ণগ্রাম রিসোর্টে
প্রায় ১০০ একর জায়গার উপর নির্মিত এই রিসোর্ট চিত্তবিনোদনের সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে সাজানো হয়েছে। সুবিশাল লেকের চারপাশে নানারকম আকর্ষণীয় স্থাপনা বানানো হয়েছে। লেকে স্পিড বোটে ঘুরে বেড়ানো, ইনফিনিটি সুমিং পুলে সাঁতার কাটা, ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো, সাফারি পার্কে নানা ধরণের বন্য পশু-পাখি দেখা, বিভিন্ন ধরণের রাইড উপভোগ আপনাকে অনেক আনন্দ দিবে।
এছাড়া ট্রেন এবং গল্ফ কারে চড়ে সমস্ত পার্ক ঘুরে দেখা যায়। আরো আছে বাচ্চাদের জন্য বেশ কিছু রাইড। পার্কে নানা ধরণের গাছপালা এবং পাখির ডাক আপনাকে বিমোহিত করবে। ইচ্ছে করলে লাক্সারি রিসোর্টে রাত্রিযাপন করতে পারেন। পার্কের ভিতরে রেস্টুরেন্ট, জুস বার, কফি শপ, সুবিশাল কার পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে।
আকারে বেশ বড় হবার কারণে এখানে যেকোনো ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠান, কর্পোরেট সভা-সেমিনার, পিকনিকের আয়োজন করা যায়। ঢাকার খুব কাছাকাছি হবার কারণে দিন দিন এখানে দর্শনার্থীদের আগমন বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুবর্ণগ্রাম রিসোর্ট কিভাবে যাবেন
ঢাকার কলাবাগান, সাইন্সল্যাব, গুলিস্থান, সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ী থেকে বাসে উঠে চলে আসবেন ভুলতা গাউসিয়া। সেখান থেকে অটো রিকশা নিয়ে চলে যাবেন সুবর্ণগ্রাম। এই রুটে বিভিন্ন ধরণের বাস চলাচল করে। এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৩০০ ফিট রাস্তা দিয়ে বিআরটিসি বাসে গাউসিয়া আসা যায়। এই রুটে পাবলিক ট্যাক্সি চলাচল করে। ভাড়া ৮০ টাকা।
এছাড়া রামপুরা-স্টাফকোয়ার্টার হয়েও গাউসিয়া আসা যায়। উবার বা প্রাইভেট কার নিয়েও চলে আসতে পারেন সুবর্ণগ্রাম। ঢাকা থেকে উবার ভাড়া প্রায় ১৫০০ টাকা।
সুবর্ণগ্রাম রিসোর্ট এর টিকেটের মূল্য
সুবর্ণগ্রাম রিসোর্টের প্রবেশ মূল্য বা এন্ট্রি ফী জন প্রতি ৩০০ টাকা। ১০ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের ২০০ টাকা। ৩ বছরের কম বাচ্চাদের কোনো ফী লাগেনা। এছাড়া স্পেশাল চাইল্ডদের এন্ট্রি ফী সহ সকল রাইড একদম ফ্রী। পার্কের ভিতরে বাচ্চাদের জন্য কিছু রাইড ফ্রী। বাকি রাইড এবং ইভেন্টের জন্য আলাদা আলাদা ফী আছে।
কর্পোরেট প্যাকেজ (প্রবেশ মূল্য + ৮ রাইড) জন প্রতি ১০০০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৮০০ টাকা। অনেক সময় ঈদের ছুটিতে সব ধরণের প্যাকেজ বন্ধ থাকে। বড় গ্রূপ বা প্রোগ্রামের জন্য কাস্টম প্যাকেজের ব্যবস্থা আছে। সুমিং পুলে লকার ভাড়া ১০০ টাকা। তবে প্রধান ফটকের লকার একদম ফ্রী। কার পার্কিং ১০০ টাকা। বাইক পার্কিং ৫০ টাকা।
সুবর্ণগ্রাম রিসোর্টে ক্যাশ পেমেন্ট এর পাশাপাশি, মোবাইল ব্যাঙ্কিং এবং সকল ধরণের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করা যায়। সুমিং পুলের কাছে পানিতে নামার জন্য টি-শার্ট এবং হাফ প্যান্ট কিনতে পাওয়া যায়। নিচে কিছু রাইডের মূল্য দেয়া হলো।
- সুমিং পুল ৩০০ টাকা।
- ম্যাজিক রাইড ১০০ টাকা।
- স্পিড বোট ১০০ টাকা।
- হুইল রাইড ১০০ টাকা।
- হর্স রাইড ১০০ টাকা।
- সাফারি রাইড ১০০ টাকা।
- ট্রেন রাইড ৫০ টাকা।
কোথায় খাবেন
সুবর্ণ গ্রাম রিসোর্টের ভিতরে রেস্টুরেন্ট, জুস্ বার, মুদি দোকান, কাবাব হাউজ আছে। রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন ধরণের খাবার পাওয়া যায়। দাম মোটামোটি হাতের নাগালে। লেকের পারে ছোট মুদি দোকান, স্ট্রীট ফুড এবং ছোট রেস্টুরেন্ট আছে। যেখানে স্বল্প খরচে সফ্ট ড্রিঙ্কস, পানি, জুস্, পপকর্ন, কেক, চকলেট, বিস্কুট, আইসক্রিম, ফুসকা, গ্রীল পরোটা, ফ্রাইড রাইস কিনতে পারেন। লাক্সারি রিসোর্ট হলেও এখানে খাবারের দাম খুব বেশি না। জনপ্রতি ২৫০ টাকা দিয়ে এখানে লাঞ্চ করা যায়।
যোগাযোগ
ঠিকানা: সুবর্ণগ্রাম অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এন্ড রিসোর্ট, মাহনা, ভুলতা, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
ফোন: ০১৯৫৮-৫৩৩১১২, ০১৯৫৮-৫৩৩১২৫, ০১৯৫৮-৫৩৩১১৯, ০১৯৫৮-৫৩৩১১৭
ইমেইল: suvarnagrama1@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ: www.facebook.com/Suvarnagram
সতর্কতা এবং পরামর্শ
- পার্কের ভিতরে ডাস্টবিন ছাড়া অন্য কোথাও ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।
- লেকের পানিতে নামা এবং আবর্জনা ফেলা নিষেধ।
- সকাল ১১ টার মধ্যে প্রবেশ করতে চেষ্টা করুন। তাহলে সব কিছু উপভোগ করতে পারবেন।
- সব টিকেট এক সাথে না কেটে যেটা পছন্দ হয় সেই রাইডের সামনে থেকে কিনুন।
- সুমিং পুলে নামার ইচ্ছে থাকলে সাথে প্রয়োজনীয় জামাকাপড় নিয়ে যাবেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।