খুলনা বিভাগের দর্শনীয় স্থান

সুন্দরবন

Loading

সুন্দরবন

সুন্দরবন (Sundarbans) হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাহারি গাছপালা, বন্য পশুপাখি ও জীবজন্তু ঘেরা গা ছমছম পরিবেশের সুন্দরবন খুবই রোমাঞ্চকর। পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল এই সুন্দরবন। এটি ইউনেস্কো ঘোষিত বাংলাদেশের তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মধ্যে একটি। বাকি ২ টি হলো ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার

সুন্দরবন কোথায় অবস্থিত

সুন্দরবন যৌথ ভাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অবস্থিত। দেশের দক্ষিণের ৫ জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা এবং পটুয়াখালী তে পরেছে বাংলাদেশের সুন্দরবন।

সুন্দরবন এর আয়তন

সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ (১,৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার) জুড়ে রয়েছে জলাকীর্ণ অঞ্চল (নদী, খাল, বিল)।

কি আছে সুন্দরবন এ

সুন্দরবনে রয়েছে বাঘ (রয়েল বেঙ্গল টাইগার), চিত্রা হরিণ, কুমির, সাপ, নানান ধরণের পাখি সহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ১২০ প্রজাতির মাছ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণী। এই বনের সব থেকে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। গাছপালার মধ্যে সুন্দরী, পশুর, কেওড়া, গেওয়া এবং গোলপাতা গাছের প্রাধান্য বেশি। যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে এই বনের নামকরণ করা হয়েছে সুন্দরবন।

সুন্দরবন এ যা যা দেখার আছে

সুন্দরবন বিশাল, কর্দমাক্ত, বিপদজনক এবং দুর্গম। সবার পক্ষে পুরাটা কভার করা মুশকিল। তাই পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এর বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পট তৈরী করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এই স্পটগুলো তুলনামূলক ভাবে সেইফ এবং সহজে যাওয়া যায়। তাদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো-

করমজল

করমজল দেখতে অনেকটা চিড়িয়াখানার মতো। এখানে দেখতে পাবেন খাঁচায় আটকানো কুমির, হরিণ। আরো দেখতে পাবেন প্রচুর উন্মুক্ত বানর। বনের ভিতর দিয়ে হাঁটার জন্য লম্বা কাঠের ওয়াক ওয়ে বানানো আছে। ওয়াকওয়েতে হাঁটার সময় বানরেরা এসে ভিড় জমায়। আরো আছে ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের ভালো ভিউ পাওয়া যায়। মংলা বন্দর থেকে এখানে যেতে হয়।

হীরণ পয়েন্ট

হীরণ পয়েন্টে কাঠের তৈরী ওয়াকওয়ে ধরে বনের মধ্যে হেঁটে যেতে দারুন মজা। এসময় বানর, হরিণ, গুইসাপ, কুমির দেখতে পাবেন। এই এলাকায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার ঘুরে বেড়ায়। ভাগ্য ভালো হলে তাদের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। অথবা পায়ের ছাপ দেখতে পারেন।

দুবলার চর

দুবলার চর সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থিত ছোট এক চর। এই চরের মাঝখান দিয়ে ছোট ছোট নদী বয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। একটু ভিতরের দিকে হওয়ায় খুব কম পর্যটকই এখানে আসে। এখানে নানা প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া, আর শুটকির পাওয়া যায়। আরো দেখা যাবে হাজার হাজার জেলের কঠোর সংগ্রামের জীবন। এখানে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। এই চরে প্রতিবছর রাস পূর্ণিমায় রাসমেলা বসে। সে সময় তা দেখতে প্রচুর পর্যটক এখানে আসে।

কটকা বিচ/জামতলা বিচ

কটকা বিচ বেশ সুন্দর এবং পরিছন্ন। এটি সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানকার বেলাভূমিতে প্রচুর লাল কাঁকড়া দেখা যায়। এখানে বন বিভাগের একটি রেস্ট হাউস আছে। এখানে তিনটি টাইগার টিলা আছে যেখানে প্রায়ই বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়। রাতে মাঝে মাঝে বাঘের গর্জন শোনা যায়। স্থানীয়রা অনেকে কটকা বিচ কে জামতলা বিচ বলে। কটকার জামতলায় একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। এই টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের ভালো ভিউ পাওয়া যায়। ভাগ্য ভালো হলে হরিণ কিংবা বাঘের দেখা পেয়েও যেতে পারেন। অনেকে জায়গাটিকে ‘বাঘের জায়গা’ও বলে। শিপ থেকে নেমে ৩০ মিনিট নির্জন বনের ভিতর দিয়ে পায়ে হেটে পৌঁছাতে হবে এখানে। মংলা বন্দর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার।

মান্দারবাড়িয়া বিচ

মান্দারবারিয়া বিচ থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়।

সুন্দরবন কিভাবে যাবেন

সুন্দরবনে প্রবেশ করার বেশ কয়েকটি পথ আছে। আপনি কোন জেলার কোন পথ দিয়ে প্রবেশ করবেন তা নির্ভর করবে আপনার উপর। তবে বেশিরভাগ মানুষ খুলনা দিয়ে প্রবেশ করে। এই পথই সব থেকে সহজ এবং সাশ্রয়ী। ঢাকা থেকে খুলনা আপনি বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে যেতে পারেন। প্রতিদিন ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ খুলনার পথে নিয়মিত চলাচল করে। ঢাকা থেকে যমুনা সেতু হয়ে ট্রেন আসে খুলনায়। এছাড়া চাইলে আকাশ পথে যশোর এসে পরে খুলনা আসতে পারেন। আপনার সময় এবং বাজেট বিবেচনা করে যেকোন একটি বেছে নিন।

সুন্দরবন দেখার সব থেকে ভালো উপায় হচ্ছে ভালো কোনো ট্যুর কোম্পানির প্যাকেজ নেয়া। তাহলে সব স্পট দেখা যায় এবং রাত্রি যাপন করা যায়। অথবা খুলনা যেয়ে শিপের প্যাকেজ নিতে পারেন। প্যাকেজ গুলোয় খাবার, যাতায়াত, থাকা ইত্যাদি সব কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর যারা অল্প খরচে সুন্দরবন দেখতে চান, তারা খুলনা এসে বাস বা প্রাইভেট কার ভাড়া করে চলে যাবেন মংলা। সেখান থেকে ট্রলার ভাড়া করে চলে যাবেন সুন্দরবনের করমজল।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সময় থাকলে দেখে যেতে পারেন আশেপাশের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান।

4.3 3 ভোট
রেটিং

লেখক

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
2 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

2
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx