বর্ষাকাল ঝর্ণা প্রেমীদের কাছে আদর্শ সময়। ঝর্ণাগুলোও এই সময় তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পায়। প্রকৃতি ফিরে পায় সজীবতা। বর্ষায় জেগে উঠা এমনই এক সুন্দর ঝর্ণা সুপ্তধারা ঝর্ণা (Suptadhara Waterfall)। কেবল বর্ষাকালেই এটি তার প্রাণচঞ্চল্য ফিরে পায়।
সুপ্তধারা ঝর্ণা কোথায় অবস্থিত
সুপ্তধারা ঝর্ণা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায়, সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের ভিতরে অবস্থিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ফকিরহাট জায়গা দিয়ে এখানে যেতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে রেললাইন পার হয়ে এর অবস্থান।
সুপ্তধারা ঝর্ণায় কখন যাবেন
কেবল বর্ষাকালেই সুপ্তধারা ঝর্ণাতে পানির প্রবাহ থাকে। এই সময়েই এটি জেগে উঠে। অন্য সময় প্রায় মৃত থাকে। তাই বর্ষাকালেই এখানে আসার সব থেকে উত্তম সময়।
সুপ্তধারা ঝর্ণা কিভাবে যাবেন
সুপ্তধারা ঝর্ণা যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। ঢাকা থেকে হানিফ, শ্যামলী, এস.আলম, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির বাস যায় চট্টগ্রাম। যে কোনো একটায় উঠে সীতাকুন্ড বাজারে নেমে যাবেন। ভাড়া নিবে নন এসি ৪৮০ টাকা, এসি ৮০০/১১০০ টাকা। তবে সুপারভাইজারকে আগে থেকে বলে রাখবেন আপনি সীতাকুন্ড বাজারে নামবেন।
এছাড়া বাস বা ট্রেনে ফেনী এসে সেখান থেকে চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাসে উঠে চলে আসবেন সীতাকুন্ড বাজার। ভাড়া ৫০/৮০ টাকা। সময় নিবে ১ ঘন্টা।
এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের লোকাল ট্রেনে (চট্টগ্রাম মেইল) গেলে সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন এ নামতে পারবেন। অন্য ট্রেন এখানে থামেনা।
চট্টগ্রাম থেকেও আসতে পারেন সীতাকুন্ড। চট্টগ্রামের অলংকার মোড়, এ কে খান মোড়, কদমতলী থেকে ফেনী গামী বাসে আসতে পারেন সীতাকুন্ড। ভাড়া ৪০/৮০ টাকা। এছাড়া সিএনজি, প্রাইভেট কার রিজার্ভ করেও আসতে পারেন। সিএনজি ভাড়া ২৫০/৩০০ টাকা।
ঢাকা থেকে সীতাকুন্ড আসতে বাসে যে ভাড়া নিবে, সীতাকুন্ড থেকে ঢাকা যেতে তার থেকে কম ভাড়া নিবে। যদিও বাস একই কোম্পানির হয়। কিছু কোম্পানির বাস ঢাকার উত্তরা এবং গাবতলী পর্যন্ত আসে। তাই আপনার বাসার কাছাকাছি আসে এমন বাসের টিকেট কাটতে পারেন।
সুপ্তধারা ঝর্ণা
সীতাকুন্ড বাজার থেকে সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন ইকো পার্ক। টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করুন। টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। ভিতরে পার্কের ম্যাপ দেয়া আছে। ম্যাপ দেখে সামনে এগিয়ে চলুন। দেড় কিলোমিটার সামনে গেলে সুপ্তধারা ঝর্ণার সাইন বোর্ড “সুপ্তধারা ঘুমিয়ে পড়ি জেগে উঠি বরষায়” দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আরো এক কিলোমিটার পাহাড়ি ট্রেইল পেরিয়ে দেখতে পাবেন সুপ্তধারা ঝর্ণা। পার্কের ভিতরে সুপ্তধারা ঝর্ণার কাছে সহস্রধারা ঝর্ণা নামে আরো একটি সুন্দর ঝর্ণা আছে।
কোথায় খাবেন
সুপ্তধারা ঝর্ণার কাছে তেমন কোনো ব্যবস্থা নাই। কেবল মাত্র কিছু মুদি দোকান আছে। খেতে হলে সীতাকুন্ড এসে খেতে হবে। সীতাকুন্ডে মোটামোটি মানের কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। তার মধ্যে সৌদিয়া, আপন, আল আমিন অন্যতম। পছন্দমতো যেকোন একটায় খেতে পারেন। তার মধ্যে আল আমিন রেস্টুরেন্ট এর খাবার সব থেকে ভাল মানের। অথবা চট্টগ্রাম এসেও খেতে পারেন। চট্টগ্রামে সব ধরণের রেস্টুরেন্ট আছে।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুন্ডে মোটামোটি মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। তার মধ্যে সাইমুন, সৌদিয়া অন্যতম। পছন্দমতো যেকোন একটায় থাকতে পারেন। অথবা চট্টগ্রাম এসেও থাকতে পারেন। চট্টগ্রামে সব ধরণের হোটেল আছে।
সীতাকুন্ডের দর্শনীয় স্থান
সীতাকুণ্ডে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। সব গুলো মোটামোটি কাছাকাছি হওয়াতে এক দিনে বেশ কয়েকটা কভার করা যায়। তবে এক রাত দুই দিন সময় নিয়ে আসলে প্রায় সব গুলো কভার করতে পারবেন। আপনার সময় বিবেচনা করে ট্যুর প্ল্যান সেভাবেই করবেন। সীতাকুণ্ডের জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট গুলো হলো:
- সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
- চন্দ্রনাথ পাহাড়
- নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
- নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
- কমলদহ ঝর্ণা
- ঝরঝরি ঝর্ণা
- বাঁশবাড়িয়া বীচ
- গুলিয়াখালি বীচ
- কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরী ঘাট
সতর্কতা এবং টিপস
- অতিরিক্ত খাবার, খাবারের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
- কাঁধের ব্যাগ নিবেন। আর ব্যাগের ওজন যাতে কম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- জোকের প্রাদুর্ভাব আছে। তাই ঘাস এড়িয়ে চলুন।
- ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।