টাইগার নেস্ট (Tiger Nest বা Taktsang) পারো শহরের মূল আকর্ষণ। গুগলে ভুটান লিখে ইমেজ সার্চ দিলে এই যায়গার একটা না একটা ছবি অবশ্যই আসবে। স্ট্যাচু অব লিবার্টি আমেরিকার, আইফেল টাওয়ার ফ্রান্সের প্রতীকের মতো কাজ করে। টাইগার’স নেস্ট কে তেমনি ভুটানের প্রতীক ধরা হয়।
টাইগার নেস্ট কি
টাইগার নেস্ট মূলত প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো এক মনেস্ট্রি। স্থানীয়রা একে বলে ‘তাক্তসাং’। তিব্বতি ভাষায় তাক্তসাং মানে বাঘের গুহা। নামের আগে টাইগার থাকলেও সেখানে কিন্তু মোটেও টাইগার দেখা যাবেনা।
টাইগার নেস্ট কোথায় অবস্থিত
টাইগার নেস্ট ভুটানের পারো শহরের কাছে প্রায় ৯০০ মিটার উপরে এক পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত।
টাইগার নেস্ট এর ইতিহাস
জায়গাটির নাম কেন টাইগার নেস্ট হলো তা নিয়ে নানান গল্প প্রচলিত আছে। একসময় নাকি এই গুহায় টাইগার থাকত। টাইগার পাহাড়ের এই জায়গায় এসে বসে বিশ্রাম নিতো। দূর থেকে তা দেখা যেত। তাদের এক ধর্মীয় গুরু পদ্মসম্ভব এখানে এসে নাকি ধ্যান করত। তিনিই টাইগারদের তাড়িয়ে তাক্তসাং গুহার ১৬৯২ সালে এখানে এক মন্দির নির্মাণ করেন। পরে একসময় নাকি সব কিছু আগুনে পুড়ে যায়। লোকজন আবার সেখানে মন্দির নির্মাণ করে।
পদ্মসম্ভব কে বলা হয় ভুটানের ধর্মীয় গুরু। উনিই প্রথম ভুটানে বুদ্ধধর্ম প্রচার শুরু করেন। তার স্মরণে মার্চ এপ্রিলের দিকে পারো তে ‘সেচু’ নামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনেকে বলে পদ্মসম্ভব তিব্বত থেকে বাঘের পিঠে করে এখানে আসেন। কেউ কেউ বলে, ‘ইয়েশে সগিয়াল’ নামে এক রাজার বৌ ছিল যে ছিল পদ্মসম্ভব এর একজন অনুসারী। সে নিজে বাঘিনীতে কনভার্ট হয়ে পদ্মসম্ভব কে তিব্বত থেকে এখানে নিয়ে আসে। এটা নিয়ে আরও নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। তবে সব কাহিনীতেই বাঘের বিষয়টা মোটামোটি কমন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই জায়গাটার নাম হয়ে যায় টাইগার্স নেস্ট।
কিভাবে যাবেন
টাইগার নেস্ট দেখতে হলে হলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে ভুটানের পারো শহর। পারো আকাশ পথে এবং সড়ক পথে, দুই ভাবেই আসা যায়। যদি প্লেনে আসেন তাহলে, প্লেন আপনাকে পারো শহরেই নামিয়ে দিবে। আর যদি সড়ক পথে আসেন তাহলে, জয়গাঁ/ফুন্টশোলিং বর্ডার দিয়ে প্রথমে ফুন্টশোলিং শহরে আসবেন। পরে ফুন্টশোলিং থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাবেন পারো শহর। পারো থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাবেন টাইগার নেস্ট বেস ক্যাম্প।
বেস ক্যাম্প থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ট্রেকিং করে যেতে হবে টাইগার নেস্ট। তাই সকাল সকাল রওনা দেয়াই ভাল। কেননা দিনের আলো থাকতে থাকতে গিয়ে আবার ফেরত আসতে হবে। এখানে ট্রেকিং এর জন্য লাঠি ভাড়া পাওয়া যায়। ট্রেকিং না করতে চাইলে ঘোড়ায় পিঠে চড়েও যেতে পারেন টাইগার্স নেস্ট। তবে ট্রেকিং করে যাওয়াই আসল মজা।
পাহাড়ে উঠার জন্য নরম জুতা পরে নিবেন। সাথে ছোট কাঁধের ব্যাগ নিতে পারেন। ব্যাগে পানি, হালকা ড্রেস নিয়ে নিবেন। গরম লাগলে ড্রেস চেঞ্জ করে নিবেন। তবে ব্যাগের ওজন যাতে বেশি না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।
ফী
টাইগার নেস্টে উঠার জন্য কোনো ফী দিতে হয় না। তবে ঘোড়া বা সাথে লোক নিলে তার ফী লাগবে। শুধুমাত্র উপুরের মন্দিরে ঠুকার জন্য ৫০০ রুপী দিয়ে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা টিকেট কাটা লাগে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।