চট্টগ্রাম বিভাগের দর্শনীয় স্থান

তিন্দু, থানচি

Loading

তিন্দু

পাহাড়, ঝর্ণা, নদী, মেঘ এক সাথে উপভোগ করতে হলে আসতে হবে তিন্দু (Tindu)। তিন্দুকে বলা হয় বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ। এখানে পাহাড় ঘিরে চলে সকাল সন্ধ্যা মেঘেদের আনাগোনা। ঝিরি পথ দিয়ে সারাদিন কল কল করে ছুতে আসা ঝর্ণার স্বচ্ছ পানি দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবেন।

অপরূপ তিন্দু

তিন্দুর রুপের বর্ণনা করা সত্যিই কঠিন ব্যাপার। শুধু মুগ্ধ হয়ে দুই চোখ দিয়ে দেখে যেতে হয় মেঘ, পাহাড়, আর খরস্রোতা সাঙ্গু নদীর সৌন্দর্য্য। স্থানীয় লোকজন এই নদী কে ডাকে শঙ্খ নদী।

এখানে বর্ষাকালে মেঘের ভিতর দিয়ে নৌকা চালিয়ে যাওয়া যায়। কিছুক্ষন চললেই মাথা ভিজে যাবে। সাঙ্গু নদীর স্বচ্ছ নীল পানি দেখে মুগ্ধ হবেন। নদীর দুই পাশের সবুজ প্রকৃতি আর মাঝে মাঝে ঝুম চাষ দেখে মনে হয় সবুজ কার্পেট।

সাঙ্গু নদী ধরে সামনে এগিয়ে গেলেই পাবেন বিশাল বিশাল পাথরের খন্ড। লোকেরা একে রাজাপাথর, বড়পাথর বলে। হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন রেমাক্রি জলপ্রপাত এবং নাফাখুম জলপ্রপাত থেকে। অনেক ভালো লাগবে।

তিন্দু কোথায় অবস্থিত

তিন্দু বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে বান্দরবান জেলার দূরত্ব প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। বান্দরবান শহর থেকে থানচি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৭৯ কিলোমিটার।

তিন্দু কখন যাবেন

তিন্দু সব সময়ই যাওয়া যায়। একেক সময় এর একেক রূপ। বর্ষা কালে সাঙ্গু নদীতে পানির প্রবাহ বেশি থাকে। আর শীত কালে কমে যায়। কিন্তু একেবারেই ফুরিয়ে যায়না। তাই তিন্দু যাওয়ার সব থেকে ভাল সময় হলো বর্ষার পর পর আর শীতের একটু আগে। মানে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে। কেননা ভরা বর্ষায় সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি থাকায় প্রশাসন থেকে অনেক সময় অনুমতি দেয়না।

তিন্দু কিভাবে যাবেন

তিন্দু যেতে হলে আপনাকে প্রথমেই আসতে হবে বান্দরবান জেলায়। তার পর সেখান থেকে থানচি উপজেলা। থানচি বাজার থেকে নদী পথে তিন্দু।

রাজধানী ঢাকার কলাবাগান, আরামবাগ থেকে শ্যামলী, হানিফ, সেন্টমার্টিন, দেশ ইত্যাদি পরিবহন কোম্পনীর এসি, নন-এসি, হুন্দাই বাস প্রতিদিন বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং ঢাকায় ফিরে আসে। জনপ্রতি বাস ভাড়া নন-এসি ৫৫০-৭৫০, এসি ১২০০-১৫০০ টাকা। রাতের বাসে রওনা দিলে সকাল ৭ টার মধ্যে চলে আসবেন বান্দরবান।

এছাড়া ট্রেন বা প্লেনে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এসে, চট্টগ্রাম থেকে বাস, প্রাইভেট কার নিয়ে বান্দরবান আসতে পারেন। বদ্দারহাট, ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ২২০ টাকা। মাইক্রোবাস ভাড়া ৩০০০-৩৫০০ টাকা।

বান্দরবান থেকে থানচি

বান্দরবান থেকে থানচি বাস বা রিজার্ভ জীপ/চান্দের গাড়িতে যাওয়া যায়। বান্দরবান শহরের থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে এক ঘন্টা পর পর বাস ছাড়ে। জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা, সময় নিবে ৪-৫ ঘন্টা। জীপ/চান্দের গাড়ির ভাড়া প্রশাসন থেকে ৬০০০ টাকা বেঁধে দিয়েছে। তবে চান্দের গাড়ির স্ট্যান্ডের একটু আগে থেকে নিলে ৫০০-১০০০ টাকা কমে পেতে পারেন।

টিম বড় হলে চান্দের গাড়ির নিয়ে যাওয়াই ভালো। সময় নিবে ৩-৩.৫০ ঘন্টা। এক গাড়িতে ১০-১২ জন বসা যায়। যাবার পথে মিলনছড়ি, চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি ছাড়াও চারপাশের অপূর্ব সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ দেখতে পারবেন, দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পারবেন।

থানচি থেকে তিন্দু

থানচি বাজারে বিজিবি ক্যাম্প থেকে গাইডের তালিকা করে দেয়া আছে। সেখান থেকে আপনাকে একজন গাইড নিতে হবে, এটি নেয়া বাধ্যতামূলক। সেই দিন সাথে গিয়ে পরের দিন ফিরে আসা পর্যন্ত গাইড ভাড়া ১৫০০ টাকা। এর পর সবার নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, বাসার ফোন নাম্বার, ন্যাশনাল আইডির কপি, কোথায় যাবেন, কয়দিন থাকবেন ইত্যাদি সব কাগজে লিখে থানা এবং বিজিবি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে। থানায় সবার গ্রূপ ছবি তুলে রাখবে। সব ক্ষেত্রে গাইড আপনাকে সাহায্য করবে।

মনে রাখবেন বিকাল তিনটার পরে আর কোনো অনুমতি দেয়া হয় না। তাই এর আগেই আপনাকে থানচি পৌঁছাতে হবে। নাহলে সেই দিন থানচি থেকে পরের দিন রওনা দিতে হবে। ৫০ টাকা করে লাইফ জ্যাকেট ভাড়া পাওয়া যায়। বর্ষাকাল হলে সবার জন্য ১ টা, না হলে অন্তত যারা সাঁতার জানেনা তাদের জন্য ১ টা করে নিয়ে নিবেন।

প্রশাসন থেকে অনুমতি পাবার পর থানচি ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করতে হবে। সেই দিন গিয়ে পরের দিন ফেরত নিয়ে আসা পর্যন্ত নৌকা ভাড়া ৪৫০০ টাকা। এটা প্রশাসন থেকে ফিক্সড করে দিয়েছ। এক নৌকায় ৪-৫ জন বসা যায়। তিন্দু পৌঁছাতে সময় নিবে ২ ঘন্টার মতো।

কোথায় থাকবেন

তিন্দুতে এখানকার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারের বাসায় রাতে থাকা যায়। অথবা উপজাতীয়দের বাসায় থাকতে পারেন। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২০০ টাকা। সাথে তাবু থাকলে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারেন। হাতে সময় থাকলে একটু এগিয়ে রেমাক্রি যেয়ে থাকতে পারেন। সেখানে বেশ কিছু কটেজ আছে থাকার জন্য। অথবা থানচি ফেরত এসেও থাকতে পারেন।

কোথায় খাবেন

উপজাতীয়দের বাসায় খেতে পারেন। জনপ্রতি খরচ হবে ২০০/২৫০ টাকা। ভাত, মুরগি, ডাল, আলুর ভর্তা থাকে মেনুতে।

ভ্রমণ টিপস এবং সতর্কতা

খরচ কমাতে চাইলে ছুটির দিন পরিহার করুন এবং দলগত ভাবে ভ্রমণ করুন। ট্রেকিং এর জন্য ভালো গ্রিপের জুতা নিবেন। সাঁতার না জানলে এবং বর্ষাকালে গেলে লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন। পাথুরে পথ অনেক পিচ্ছিল, তাই সাবধানে হাঁটবেন। থানচির পর বিদ্যুৎ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক নাই। তাই মোবাইল, পাওয়ার ব্যাংক চার্জ দিয়ে রাখুন।

কেবল কাঁধের ব্যাগ সাথে নিবেন এবং ব্যাগের ওজন যত কম হয় সেই দিকে খেয়াল রাখুন। প্যারাসিটামল, গ্যাসের ঔষধ, স্যালাইন ইত্যাদি দরকারি ঔষধ সাথে রাখুন। দল ছাড়া একা কোথাও যাবেন না। দলের বাকি সদস্যদের খেয়াল রাখুন। একজনের বিপদে এগিয়ে আসুন। আদিবাসীদের সাথে ভালো আচরণ করুন।

3.5 4 ভোট
রেটিং

লেখক

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
1 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

1
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx