বাংলাদেশ ভ্রমণ কাহিনী

বগালেক ও কেওক্রাডং ভ্রমণ বৃত্তান্ত

Loading

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
napittochara-trail-3
কটেজ
napittochara-trail-3
বগালেক
napittochara-trail-3
পাহাড়ে ঝুম চাষ
napittochara-trail-3
বগালেক
Shadow

ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান কিংবা চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান গিয়ে বগালেক-কেওক্রাডং যাওয়া যায়। আমাদের যাত্রাপথ ছিল ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম হয়ে বান্দরবান।

বান্দরবান থেকে সরাসরি চান্দের গাড়ি অথবা ল্যান্ড ক্রুজার রিজার্ভ করে সরাসরি বগালেক পর্যন্ত যাওয়া যায়। অথবা বান্দরবান থেকে বাসে ৪৮ কিলোমিটার পারি দিয়ে রুমা বাজার গিয়ে সেখান থেকে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে বগা লেক যাওয়া যায়। আমরা যাওয়ার পথে বাসে রুমা বাজার পর্যন্ত যাই।

রুমা বাজার থেকে আগে থেকে ঠিক করা গাইড নিয়ে আর্মি ক্যম্পে নাম এন্ট্রি করে সেখান থেকে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে বগা লেকের উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করি। মাঝপথে গাড়ি থেকে নেমে রুমা থানায় আবার সবার নাম এন্ট্রি করতে হয়।

বগালেকে নেমে আবার আর্মি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করে আমাদের আগে থেকে বুক করা সিয়াম দিদির লেক পারের কটেজে উঠি। কটেজে ব্যাগপত্র রেখে, বগালেকের হিম শীতল পানিতে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে বগালেকের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বেরিয়ে পরি।

বগালেক

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০০ ফিট উপরে আনুমানিক ২০০০ বছর পুর্বে সৃষ্টি হয়েছিল এই লেক। ভূতত্ত্ববিদদের মতে মৃত কোন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা উল্কাপিন্ডের পতনের কারনে এই লেক সৃষ্টি হয়েছে।

বগালেক ১১৫ ফিট গভীর এবং পানি অনেক শীতল। বগালেকে গোসল করার অনুমতি থাকলেও সাতার কাটার অনুমতি নেই। বগালেকের শীতল পানিতে গোসল করলে সারাদিনের ভ্রমনক্লান্তি নিমিষেই দুর হয়ে যায়।

সন্ধ্যার পর ছিল বার্বিকিউ আয়োজন। কেউ বার্বিকিউ করছে কেউ গিটারে গান ধরেছে। আর আমরা সাথে সুর মেলাচ্ছি। পাহাড়ের পাদদেশে লেকের পারে চাঁদের আলোয় বার্বিকিউর উঠা ধুয়া আর গিটারে বাজানো গানের সুরে যেন এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।

কেওক্রাডং

বগালেক থেকে ভোরে উঠে সকালে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করে নাস্তা সেরে কেওক্রাডংয়ের উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করি। কেওক্রাডং যাওয়ার ১৪ কিলোমিটার পথ পুরোটাই ট্র‍্যাকিং করে (পায়ে হেঁটে) যেতে হয়।

পাহাড়ি উঁচুনিচু রাস্তা হওয়ায় এই পথটা অনেক দুর্গম এবং কষ্টসাধ্য। কম বয়সি বাচ্চা কিংবা বেশি বয়স্কদের এই পথে না যাওয়াই ভাল।

কেওক্রাডং যেতে মাঝখানে পরে চিংড়ি ঝর্না, সেখানে চাইলে গোসল করে করে ফ্রেশ হয়ে আবার হাঁটা শুরু করতে পারেন। আমরা ঝর্নায় জলকেলি করে বোতলে ঝর্নার স্বচ্ছ জল নিয়ে আমাদের গন্তব্য কেউক্রাডংয়ের পথে হাঁটা শুরু করি।

ঝর্নায় যাওয়ার পথটি অনেক পিচ্ছিল এবং রিস্কি তাই ঝর্নায় যাওয়ার পথে অবশ্যই অতিরিক্ত সাবধনতা অবলম্বন করবেন নয়তো সাথে নেয়া ফার্স্ট এইড বক্সের জিনিস পত্র ব্যাবহার করা লাগতে পারে

যেতেযেতে পথে পুর্নিমা রাতে sorry ?, যেতেযেতে পথে পরবে “তমেং ভিউ পয়েন্ট” সেখানে একটু জিড়িয়ে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করবেন। পথে পরবে জুম চাষিদের চাষবাস। পাহাড়ের ঢালে ধান, হলুদ, মরিচ, আদা চাষ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে।

কেওক্রাডং এর কাছাকাছি যেতেই পরবে দার্জিলিং পাড়া। সেখান থেকে কেওক্রাডং এর চূড়া দেখা যায় এবং ভাল ভিউ পাওয়া যায়। শেষ মুহুর্তের চা নাস্তা শেষ করে আমরা আবার হাঁটা শুরু করলাম এবং এক সময় চূড়ায় পৌছাতে সক্ষম হলাম।

কেওক্রাডং এর চূড়ায়

কেওক্রাডং পৌছে আবার আর্মি ক্যাম্পে এন্ট্রি সাইন করতে হয়। আমরা যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন গাইড এবং টুরিস্ট মিলিয়ে কেওক্রাডংয়ে প্রায় ২২০+ মানুষ অবস্থান করছিলাম।

চূড়ায় পৌছে আশেপাশের ভিউ দেখলে আপনার ভ্রমণ ক্লান্তি দুর হয়ে যাবে আশা করি! যদিও রাতে ঘুমানোর আগে ব্যাথার ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমানো লাগতে পারে।

বগালেকের মত এখানেও আপনাকে থাকা ও খাওয়ার জন্য আদিবাসী কটেজের উপরই নির্ভর করতে হবে। আগে থেকে বলে রাখলে গাইড সব ব্যাবস্থা করে রাখবে। আমরা আলু ভর্তা ডাল আর খাসির মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খাই।

কেওক্রাডংয়ে পানির অনেক সংকট। হাত মুখ ধুয়ার পানি ফ্রিতে পেলেও গোসল করার জন্য আপনাকে ৫০ টাকা প্রতি বালতি পানি কিনে ব্যাবহার করতে হবে। ৫০ টাকায় এক বালতি পানি কিনে গোসল করার পর অনেক ফ্রেশ লাগছিল, আর মনে মনে ভাবছিলাম আল্লাহর নিয়ামত পানি আমরা কতভাবেই না অপচয় করে চলছি।

কেওক্রাডংয়ের চুড়ায় বসে মেঘের আনাগোনা দেখা, সুর্যাস্ত দেখা, রাতে চাঁদের আলোয় পাহাড় দেখা এবং সকালে পাহাড়ের চূড়ায় সুর্য উদয় দেখা ছিল আমাদের জীবনের সেরা কিছু মুহুর্ত।

সকালে ডিম মুগডাল আর পরটা দিয়ে নাস্তা সেরে আমরা আবার বগালেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। বগালেকে এসে লেকের পানিতে গোসল সেরে দুপুরের খাবার বগালেকে খেয়ে চান্দের গাড়িতে সরাসরি বান্দরবানের উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করি।

যেখানে যেখানে আর্মি ক্যাম্পে এন্ট্রি সাইন করেছিলাম সব যায়গায় আবার এক্সিট সাইন করে সন্ধ্যার মধ্যে বান্দরবান ফিরে আসি। রাতে বাসে চট্টগ্রাম হয়ে সেখান থেকে ট্রেনে নিরাপদে বাসায় ফিরে আসি।

বগালেক-কেওক্রাডং এর প্রস্তুতি

  • দুর্গম পাহাড়ি পরিবেশ হওয়ার কারনে আপনি যখন তখন যা চাইবেন তা পাবেন না। তাই দরকারী জিনিসপত্র আগে থেকেই হাতের কাছে রাখতে হবে।
  • থাকা খাওয়া, আসা যাওয়া, গাইড নেয়ার ব্যাপারগুলো আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে।
  • পাওয়ার ব্যাংক, দরকারী ঔষধপত্র, স্যালাইন, শুকনো খাবার(পথে খেতে চাইলে) সাথে নিয়ে যাবেন।
  • এই পথে অনেক বেশি আর্মি ক্যাম্প। প্রতি ক্যাম্পেই আপনাকে নাম ঠিকানা লিখে সাইন করতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই ব্যাপারগুলো ধৈর্য্য ধারণ করে পালন করুন।
  • কেওক্রাডংয়ের হ্যালিপ্যডে প্রচুর জোকের উপদ্রব আছে। ঘাসের উপর না হেঁটে মাটি কিংবা পাঁকা মেঝেতে হাটার চেষ্টা করবেন।

যাতায়াত খরচ

  • ঢাকা থেকে বান্দারবান এর এসি নন এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া জনপ্রতি ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা।
  • বান্দারবান থেকে লোকাল বাসে রুমা ভাড়া ১২০/১৫০ টাকা মাথাপিছু।
  • রুমা থেকে বগালেক চান্দের গাড়ি ২২০০+- টাকা, ধারণ ক্ষমতা ১৪ জন।
  • তাছাড়া বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়িতে সরাসরি বগালেক যাওয়া আসা(একদিন মধ্য বিরতি) ১২০০০ থেকে ১৪০০০ টাকা।
  • স্বাস্থবিধি মানার জন্য আমাদেরকে প্রতি জিপে ৭ জন করে যেতে হয়েছিল। তাই যাওয়ার আগে আপডেট নিউজ জেনে যাবেন।

বগালেক-কেওক্রাডং এ থাকা খাওয়া

আদিবাসী কটেজে থাকা মাথাপিছু ১৫০/২০০ টাকা ভাড়া। এক রুমে ১০ জন করে থাকা যায়। ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে প্রতিবেলার খাবার পাওয়া যায়। তবে খাবারের জন্য আগে থেকে বলে রাখতে হয়। পাহাড়ি আইটেম হিসেবে চাইলে ব্যাম্বু চিকেন, বাঁশ কোড়ল এর স্বাদ নিতে পারেন।

গাইড

রুমা বাজার থেকে গাইড নেয়া বাধ্যতামূলক। গাইড খরচ বগালেক পর্যন্ত ১৫০০ টাকা, কেওক্রাডং পর্যন্ত ২৬০০+- টাকা। গাইড পবন দাস ০১৮৫৫৫৩৩৮৪৪, গাইড উজ্জ্বল ০১৮৮৭৬৬৯৮৪১

নোট

প্রতিটি ভাড়া, থাকা, খাওয়ার খরচ সময় এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে কম বেশি হতে পারে। যাওয়ার আগে কয়েকজন গাইডের সাথে কথা বলে যাচাই করে যাবেন তাহলে হালনাগাদ দর দাম সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

অবশ্যই পালনীয়

প্রাকৃতিক পরিবেশে পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে নির্দৃষ্ট যায়গায় ময়লা ফেলুন। ময়লা ফেলার যায়গা না পেলে নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে ময়লা ফেলার ডাস্টবিনে ময়লা ফেলুন।

ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন। হ্যাপি ট্রাভেলিং

4.4 5 ভোট
রেটিং

লেখক

আহমেদ ফারুক
Subscribe
Notify of
1 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

1
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx