অনেকবার পরিকল্পনা করেও ট্রলারে সেন্টমার্টিন যাওয়া-আসার শখটা পূরণ হচ্ছিল না! তাই এবার হুট করেই সেই সুযোগ টা চলে আসলো। ২ বন্ধু ফোন করে জানালো তাঁরা ট্রলারে সেন্টমার্টিন যেতে প্রস্তুত। আমাকে আর পায় কে।
ট্রলারে সেন্টমার্টিন
ভোর ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ রওনা হয়ে ট্রলার ঘাটে পৌঁছালাম সকাল ৯.৩০ টায়। গিয়েই জানতে পারলাম ট্রলার ছাড়বে দুপুর ২ টায়। ২ বন্ধু ও ঢাকা থেকে পৌঁছে গেলো সময়মত। যেহেতু অনেক রোদ আর ট্রলার ছাড়তে ও দেরি হবে তাই ঘাটের পাশেই একটি হোটেলে বাজেট রুম নিয়ে বিশ্রাম নিলাম।
দুপুর ২ টায় ঘাটে গিয়ে শুনতে পাই জোয়ারের পানি পরিপূর্ণ না হওয়ায় আরো ১ ঘন্টা পরে ট্রলার ছাড়বে। অপেক্ষা করতে লাগলাম। ঠিক ৩.১০ টায় ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় প্রচুর মালামাল ও যাত্রী নিয়ে। সূর্য একদম মাথার উপরে।
নাফ নদীতে ট্রলার
ট্রলার নাফ নদী দিয়ে চলতে লাগলো। একপাশে মায়ানমারের বিশাল বিশাল পাহাড়, আর অন্যদিকে টেকনাফের সমতল ভূমি ও নীল আসমানে হেমন্তের শুভ্র মেঘমালা এক নয়নাভিরাম দৃশ্য উপস্থাপন করছে। দেখতে খুবই অপরূপ লাগছে। এ যেন শিল্পীর তুলিতে আকাঁ কোন দৃশ্যপট।
সাধারণত ট্রলার গুলি মায়ানমারের সীমানা ঘেঁষে সেন্টমার্টিন যাত্রা করে, তাই ভীনদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনা প্রবেশে স্বচক্ষে অবলোকন করা যায়। সূর্যের তাপ প্রখর হওয়ায় মাথায় টুপি ও গামছা দিয়ে কিছুটা শীতলতার অনূভুতি নেওয়ার চেষ্টা করলাম। তাছাড়া খাওয়ার পানি, চিপস, পেয়ারা ও কলা তো আছেই৷
১.৩০ ঘন্টা ট্রলার চলার পর যখন নদী পেরিয়ে সমুদ্রে প্রবেশ করে তখন মনের ভিতরে অন্যরকম ভয় কাজ করে। যতদূর চোখ যায় নীল নোনা জলরাশীর দিগন্ত বিসৃত অসীম আধার। আবার মাঝ সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউ ট্রলারকে দুলিয়ে দেয়। যেন পুরো ট্রলারটিই একটি দোলনা। অনেকের চোখেমুখে আতংকের চাপ।
অনেকের চোখেমুখে আতংকের চাপ। গভীর সমুদ্রের মাঝে কালো কালো ছোট্ট ছোট্ট মাছ ধরার ট্রলার আপনাকে সাহস জোগাবে। তারা পারলে আমি কেন পারবো না সূর্য ডুবতে বসেছে। মনে হচ্ছে বিশাল সমুদ্র গিলে খাচ্ছে রক্তিম সূর্যকে। চারিদিকে গোধূলির রক্তিম আভা সাগরকে অতুলনীয় করে তুলেছে। আঁধার নেমে আসলো। ট্রলার চলছে তার আপন গতিতে।
ট্রলারে সেন্টমার্টিন পৌছালাম
ঠিক ৬.৩০ টায় ট্রলার সেন্টমার্টিন ঘাটে পৌঁছে গেলো। সবার মনের কুঠিরে তৃপ্তির ঢেকুর চলচলিয়ে গেলো। ট্রলার থেকে নেমেই বাজেট হোটেল খুজতে শুরু করলাম এবং খুব সহজেই মাত্র ৪০০ টাকায় ৩ জনের জন্য খুব ভালো রুম পেয়ে গেলাম একদম সমুদ্রের পাড়ে।
হোটেলে শুধু ব্যাগটা রেখেই রাতের সমুদ্রে নেমে পড়লাম। সারাদিনের রোদের খাটনি, ট্রলারের ইঞ্জিনের আওয়াজ এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। প্রায় ৩০ মিনিট রাতের সমুদ্রে গোসল করে রুমে এসে কাপড় পরিবর্তন করে বাজারে চলে গেলাম খাওয়ার জন্য।
রুপচাঁদা ফ্রাই, টুনা বার-বি-কিউ, কাঁকড়া ফ্রাই, কোরাল ফ্রাই দিয়ে রাতের ভোজ শেষ করলাম। খেয়েই সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে হোটেলের দিকে আসতে লাগলাম। লোকজন নাই বললেই চলে, যেহেতু পর্যটন মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। একটি কচি ডাবের পানি খেয়ে নিলাম। আহা তৃপ্তি।
তারপর রুমের সামনের সমুদ্রে চেয়ার নিয়ে অনেক্ক্ষণ ধরে রাতের ঝিলমিল আকাশ, সমুদের গর্জন উপভোগ করতে লাগলাম। মাঝে মাঝে ঐ দূর আকাশ থেকে তারার খসে পড়া বেশ ভালোই লাগছে। আর গুনগুনিয়ে গাইছি।
আমি ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া, জোছনা ধরতে যাই। হাত ভর্তি চাঁদের আলো,ধরতে গেলে নাই
উপভোগ করতে করতে কখন যে রাত ১২ টা বেজে গেলো টেরই পেলাম না। রুমে এসে শরীরটা বিলিয়ে দিয়ে ঘুম দিলাম। তারপর দিন সকালে ঘটলো আরেক কাহিনী। পরবর্তী লেখায় সেটা দেখে নিতে পারেন।
- আজকের খরচঃ ৮৬৫ টাকা।
- একজন ভ্রমণকারী হিসেবে ট্রলারে সেন্টমার্টিন যেতে নিরুৎসাহিত করছি।
- সর্বোচ্চ পরিমাণ সাহসী না হলে ট্রলারে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করবেন না।
- সী সিকনেস থাকলে ট্রলারে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করবেন না।
- ভ্রমণ তারিখঃ ১১/১০/২০২০ ইং
ভ্রমণ হোক আনন্দময় ও নিরাপদ।