প্লেনে বা ফ্লাইটে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা খুবই চমৎকার এবং উত্তেজনাকর। তবে প্রথমবার ভ্রমণের সময় এ নিয়ে অনেকেই খুব চিন্তিত এবং ভয়ে থাকে। কিছু জিনিস ফলো করলে সহজেই আপনি প্লেনে ভ্রমণ সংক্রান্ত যাবতীয় ভোগান্তি এড়াতে পারেন। আসুন জেনে নেই প্লেনে ভ্রমণ এর সময় কী কী করবেন।
প্লেনে ভ্রমণ এর সময় যা করবেন
প্লেনে রমণের সময় নিচের জিনিসগুলো মেনে চলবেন। তাহলেই এটি সারা জীবনের জন্য নিঃসন্দেহে এটি আনন্দময় স্মৃতি হয়ে থাকবে।
টিকেট বুকিং
প্লেনে কোথাও যেতে হলে সবার প্রথমে টিকেট বুক করা লাগে। টিকেট বুকিং করার জন্য এয়ারলাইন্স কোম্পনি বা তাদের ট্রাভেল এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার ভ্রমণ সময় আর প্লেনের শিডিউল মিলিয়ে টিকেট কনফার্ম করুন। সময় না মিললে অন্য এয়ারলাইন্স দেখুন অথবা আগে ভ্রমণ করুন।
ভ্রমণ কার ১/২ মাস আগেই টিকেট বুকিং করা ভালো। তাহলে কম দামে টিকেট পাবেন। আর সীট পাওয়ার সম্ভবনা বেশি। এখন অনলাইনে বাসায় বসেও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টিকেট কাটা যায়। অনেক এয়ারলাইন্স EMI সুবিধাও প্রধান করে।
ফ্লাইটের প্রস্তুতি
ভ্রমণের দিন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সাথে নিয়েছেন কিনা দেখে নিন। যেমন, পাসপোর্ট, ভ্রমণ সঙ্ক্রান্ত কাগজপত্র, ভিসা ইত্যাদি। ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে বেশি কাগজপত্র লাগলেও দেশের ভিতরে ডোমেস্টিক ফ্লাইটে কম লাগে। এয়ারপোর্টে পৌঁছে বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্ণ করা লাগে। তাই ফ্লাইট ছাড়ার বেশ কিছুণ আগেই এয়ারপোর্টে পৌঁছান। ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট হলে ৩ ঘন্টা আর ডোমেস্টিক ফ্লাইট হলে ১ ঘন্টা আগে গেলেই হবে।
এয়ারলাইন্স ভেদে বিভিন্ন ওজনের লাগেজ বা ব্যাগ আপনি সাথে নিতে পারবেন। তাই লাগেজ প্যাক করার আগেই সেটা জেনে নিন। ওজন বেশী হলে আপনাকে লাগেজের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে। এয়ারপোর্টের ভেতরেই ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। লাগেজ এর বাহিরে হ্যান্ডব্যাগও আপনি সাথে নিতে পারবেন।
চেক ইন
এয়ারপোর্টে আইডি প্রফ এবং টিকেট দেখিয়ে আপনার এয়ারলাইন্স এর টার্মিনালে প্রবেশ করুন। টার্মিনালে ঢুকে প্রথম কাজ হলো চেক ইন করা। মনিটর এবং বোর্ডের দিকে খেয়াল রাখুন। কখন কোন কাউন্টারে চেক ইন করতে হবে তা মনিটরে দেখাবে। নির্ধারিত সময়ে কাউন্টারে গিয়ে আপনার টিকেট, ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখিয়ে চেক ইন করুন।
এখানে আপনার লাগেজ জমা দিতে হবে। চেক ইন অফিসার আপনাকে বোর্ডিং পাস এবং লাগেজের জন্য একটি কার্ড দেবেন। টিকেট আগে কাটলেও এখানেই আপনাকে সীটের সিরিয়াল দেয়া হবে। আগে গেলে প্রথম দিকের সীট পাবেন। এজন্য আগে আগে যাওয়াই ভালো। সাথে কেউ থাকলে পাশাপাশি বসতে চাইলে কিংবা জানালার কাছের সীট দরকার হলে কাউন্টারে বলুন।
বোর্ডিং
চেক ইন শেষ করার পর আপনাকে যেতে হবে ডিপার্চার লাউঞ্জে। এখানে যাবতীয় সিকিউরিটি চেক করা হবে। আপনার মোবাইল, জ্যাকেট, ল্যাপটপ, জুতা, বেল্ট, সাথের হ্যান্ড ব্যাগ ইত্যাদি বাইরে রেখে সব কিছু চেক করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে সিকিউরিটি অফিসার আপনার হ্যান্ডব্যাগ এবং বোর্ডিং পাসে স্ট্যাম্প লাগিয়ে দিবেন।
দেশের বাইরে গেলে এখানে আপনার ইমেগ্রেশন তথ্য চেক করা হবে। পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য, দাও্য়াতপত্র ইত্যাদি সবরকম ডকুমেন্ট এখানে দেখাতে হবে। তাদের কাছে কোনকিছু সন্দেহজনক মনে হলে তারা আপনাকে ফ্লাই করতে নাও দিতে পারে। আর সব কিছু ঠিক থাকলে শুধু প্লেনে প্রবেশের জন্য সর্বশেষ জায়গায় অপেক্ষা করতে বলবে। ফ্লাইটে প্রবেশ করার আগ মুহূর্তে আবারো বোর্ডিং পাস চেক করবে। একটি অংশ কেটে রেখে দিতে পারে।
প্লেনের ভেতরে
বোর্ডিং পাসে সীট নাম্বার দেয়া থাকে। তা দেখে আপনার জন্য নির্ধারিত সীটে বসে পড়ুন। সাথের ব্যাগ সাবধানে উপরে রেখে দিন। সব যাত্রী প্রবেশ করলে প্লেনের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্লেন টেক-অফ করার আগে কিছু সতর্কতা মূলক নির্দেশনা দেয়া হবে। মনোযোগ সহকারে খেয়াল করুন। সীট বেল্ট বেঁধে ফেলুন।
প্লেন টেক-অফ করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। শব্দও বাড়তে পারে। দুশ্চিন্তা করবেন না। সীটবেল্ট সিগন্যাল যখন দেখা যাবে তখন দাঁড়ানো যাবে না। প্লেন একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠে গেলে এই সিগন্যাল বন্ধ করে দেয়া হবে। তখন সীট থেকে উঠতে পারবেন। প্লেনের ভিতরে টয়লেট থাকে। প্রয়োজন হলে ব্যবহার করতে পারেন।
ল্যান্ড করার পর
ল্যান্ড করার সময় আবার সীট বেল্ট বেঁধে ফেলুন। আপনি বুঝতে পারবেন যে, প্লেন নীচের দিকে যাচ্ছে। প্লেনের চাকা রানওয়ে স্পর্শ করলে শব্দ বাড়তে থাকে আর গতি কমতে থাকে। প্লেন আপনাকে একটা টার্মিনালে নামাবে। প্লেন থামার সাথেই দাঁড়িয়ে যাবেন না। সিট বেল্ট খোলার নির্দেশনা দেওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
সাবধানে ব্যাগ নিন। নামার আগে কোন বেল্ট এ লাগেজ আসবে জেনে নিন। বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নামার পর ইমিগ্রেশন অফিসে আপনাকে পাসপোর্ট দেখাতে হবে। এরপর আপনার লাগেজ, ব্যাগ বুঝে নিন। সবশেষে টার্মিনাল থেকে বের হয়ে পড়ুন।
প্লেনে ভ্রমণ এর সময় আরো কিছু টিপস
প্লেনের ভিতরে আরো বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। তা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন এবং মেনে চলবেন। প্রত্যেক এয়ারপোর্টে যে কোন তথ্যের জন্য তথ্যকেন্দ্র রয়েছে। তারা আপনাকে সব ব্যাপারে সাহায্য করবে। এই পদক্ষেপগুলো মেনে চললে আশাকরি আপনি কোন সমস্যায় পড়বেন না। আপনার ভ্রমণ সুন্দর এবং ঝামেলামুক্ত হউক।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।